Tuesday, September 15, 2020

শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু : (পর্ব ৭)

 শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু : (পর্ব ৭)

১৯৭২ - ৭৩ সাল সদ্য স্বাধীন যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি দেশ। রেলপথ, নৌপথ, রাস্তা ঘাট, ব্রিজ কালভার্ট, স্কুল কলেজ ধ্বংস, ভঙ্গুর অবকাঠামো, ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থিনীতি। নেই নিজস্ব কোনো বিমান। অচল অকেজো সমুদ্র বন্দর। বন্দরে মুক্তিযোদ্ধাদের ডুবিয়ে দেয়া অসংখ্য জাহাজ ও পুঁতে রাখা মাইন। সারা দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকের হাতে ও রাজাকার, আলবদর আলশামস ও পাকিস্তানিদের ফেলে যাওয়া অস্রে সয়লাব। চুরি ডাকাতি ছিনতাই রাহাজানি বেড়ে গেছে। পাকিস্তানি দালাল ও কিছু কুচক্রীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ধান,চাল,গম, পাটের গুদামে আগুন লাগানো ও লবন গম সহ খাদ্যের জাহাজ ডুবিয়ে দেয়া ছিলো প্রায় নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার !!

হানাদার পাকিস্তানিরা সারেন্ডারের পূর্বে বিভিন্ন জেলায় এমন কি বাংলাদেশ ব্যাংক ( State Bank of East Pakisthan) এর ট্রেজারী তেও নোটের বান্ডিলে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিল।

সদ্য স্বাধীন দেশের কারেন্সি বলে কিছু ছিলোনা। কারেন্সি ছাপাতে যে অর্থের প্রয়োজন তাও নেই আমাদের। ভারত শুভেচ্ছা স্বরূপ প্রথমে কিছু টাকা চাপিয়ে দিলো। যা ছিলো অত্যন্ত নিন্মমানের কাগজের। অনেকটা লটারী টিকিটের মত। কিছুদিনের মধ্যেই বাজারে নকল টাকার ছড়াছড়ি। ফলস্বরূপ মুদ্রাস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতি! পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু সম্ভবত পূর্ব জার্মানি থেকে কারেন্সি ছাপিয়ে এনেছিলেন।

তার উপরে বাড়তি যোগ হয়েছে বিরোধী রাজনীতির নামে নৈরাজ্য খুন অরাজকতা। ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ গড়ার কথা থাকলেও তা ব্যর্থ হলো। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র, গণবাহিনী, স্বাধীন পূর্ব বাংলা, শ্রেণী শত্রু খতম, সর্বহারা ইত্যাদি নানান ভাওতাবাজি দেশে আরও জটিল অশান্তি সৃষ্টি করলো !

যা প্রকারান্তরে দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের এবং স্বাধীনতা বিরোধীদের হাত কে শক্তিশালী করে বঙ্গবন্ধু ও দেশের বিরুদ্ধে ব্যাপক চক্রান্তের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিলো।

এমনিতর একটি খারাপ পরিস্থিতি তে বঙ্গবন্ধু মেয়েদের অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা ব্যবস্থা আপাততঃ স্থগিত ঘোষণা করলেন। আর সেই ঘোষণার বিরুদ্ধে আমরা কজন কিশোরী সার্বিক অবস্থা না বুঝেই প্রতিবাদ করেছি !

কিন্তু কি আশ্চর্য এমনি পরিস্থিতিতে ছাত্রলীগের ও শেখ কামাল ভাইয়ের অনুমতি ও সাহস সহযোগিতা আমরা পেলাম সেই আন্দোলনে! আজকের এই নষ্ট রাজনীতির যুগে আমি ভাবতেও পারিনা সরকারের ছাত্র সংগঠন আন্দোলন করছে সরকারের বিরুদ্ধে !!
খোদ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে !!!
আর সেখানে আড়াল থেকে উৎসাহ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবের পুত্র শেখ কামাল !!!

এটাই বোধ করি গণতন্ত্র। ব্যক্তি স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা, সাংগঠনিক এবং গণতান্ত্রিক অধিকার। যা আজকের বাংলাদেশে কল্পনায় আনতেও ভয় হয়।


পরবর্তী কালে প্রধানমন্ত্রী পুত্রদের দেখেছি বিরোধী দলকে নিস্তব্ধ নিঃশেষ করে দিতে ইতিহাসের লজ্জাজনক ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করতে কিংবা ক্রিকেট ব্যাট নিয়ে মাঠে মহড়া দিতে।

যাক মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি। আমরা পরের দিন থেকেই নেমে পড়লাম মাঠ গোছাতে। মূলতঃ ডাবলু ভাইকে সাথে নিয়ে আমরা দুজন ( আমি ও পারভীন) বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে বিষয়টি ছাত্রীদের বুঝিয়ে তাদের অধিকার আদায়ে আমাদের সাথে সম্পৃক্ত করতে শুরু করলাম।

লালমাটিয়া গার্লস স্কুল, মোহাম্মদপুর গার্লস স্কুল, রায়ের বাজার টালী অফিস গার্লস স্কুল, কলাবাগান লেকসার্কস গার্লস স্কুলের ছাত্রীদের আমরা প্রথম ধাপে ঐক্যবদ্ধ করলাম।

সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমরা প্রত্যেক স্কুলের তিন- চার জন মেয়েকে নিয়ে একদিন সকাল ৮ টা - সাড়ে ৮ টা নাগাদ গেলাম ৩২ নাম্বারে বঙ্গবন্ধুর বাসায়। আমরা পৌঁছাতেই গেট খুলে আমাদের ভেতরে নেয়া হলো। উল্লেখ্য বঙ্গবন্ধুর দরজা সকল বাঙালির জন্যই ছিল উম্মুক্ত। বঙ্গবন্ধু মেয়েদের কথা শুনে বেরিয়ে এলেন সামনের বারান্দায়।


সেই মুহূর্তের আবেগ ও শ্রদ্ধা মিশ্রিত অনুভূতি আজও চোখের সামনে ভেসে বেড়ায়। জীবনে প্রথম এত কাছ থেকে দেখছি জাতির পিতাকে। আমরা টুপ টুপ করে পা ধরে সালাম করলাম সবাই। বঙ্গবন্ধু মাথায় হাত বুলিয়ে স্বভাব সুলভ ভাবে জিজ্ঞেস করলেন-
" কিরে কি সমস্যা তোদের ?"

চলবে-------

শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু : (পর্ব ৮)

 

শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু : (পর্ব ৮) https://www.facebook.com/nazma.a.kawsar? 

বঙ্গবন্ধু কে সামনে দেখে আমি বেশ আবেগ আপ্লুত হলাম। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতা আমাদের বাংলাদেশের স্থপতির সামনে আমি দাঁড়িয়ে। কিন্তু উনার সাবলীল স্নেহময় কথায় মনে হলো উনি যেন কতো আপন।

যেহেতু মূল নেতৃত্বে ছিলাম লালমাটিয়া গার্লস স্কুল তাই আমরাই কথা বললাম। সংক্ষেপে বিষয়টি বঙ্গবন্ধু কে জানালাম। উনি শিক্ষা মন্ত্রী ইউসুফ আলীর সাথে আলাপ করবেন বললেন।
উনি হানিফ ভাই ও মহিউদ্দিন ভাই কে ডেকে বললেন আমাদের দাবি গুলো লিখে নিতে। সেখানে তোফায়েল ভাই ও ছিলেন তখন।
আমরা আমাদের দাবী গুলো লিখে দিলাম।


প্রথমত: মেয়েদের অবৈতনিক শিক্ষা ব্যবস্থা পুনরায় চালু করতে হবে। দ্বিতীয়ত: পাঁচ মাসের বকেয়া বেতন মওকুফ করতে হবে। এছাড়াও গার্লস স্কুলের বিষয়ে আমরা আরো কয়েকটি বাড়তি দাবি দাওয়া লিখে দিয়েছিলাম এতদিন পরে আজ আর সেগুলো মনে নেই। সেদিনের মতো আমরা বিদায় নিলাম।

তার সপ্তাহ খানেক পরে আমরা লালমাটিয়া গার্লস স্কুল, মোহাম্মদপুর গার্লস ও টালী অফিস গার্লস স্কুল এর ছাত্রীরা মিলে সকালে মিছিল করে বঙ্গবন্ধুর বাসায় যাওয়ার কর্মসূচি নিলাম।

জুন মাসের নির্দিষ্ট দিনে আমরা সকালেই গিয়ে স্কুলে ছুটির ঘন্টা বাজিয়ে দিলাম। হেড মিস্ট্রেস যখন শুনলেন বঙ্গবন্ধুর বাসায় যাবো শুনে তিনি হতবাক কিং কর্তব্য বিমূঢ় ! উনি কিছু বলার আগেই ছাত্রীরা সব হুড়মুড় করে দৌড় দিলো বাইরে।
কে শুনে কার কথা ছাত্রীরা ততক্ষনে গেটের বাইরে। গেটের দারোয়ান আমাদের পক্ষে 😉 ( আগেই ম্যানেজ)।

 মোহাম্মদপুর স্কুল থেকে আপেল, সাগর ( ফর্সা লুৎফর ভাইয়ের ভাগ্নি) এর নেতৃত্বে মিছিল এলো। তত্ত্বাবধানে পিয়ারু ভাই বাদল ভাই।
টালী অফিস স্কুলের বেশ কজন এলো ছাত্রলীগের স্থানীয় নেতা জগলু ভাইয়ের নেতৃত্বে। সার্বিক নেতৃত্বে ডাবলু ভাই, সিরাজ ভাই, রিয়াজ ভাই।

সবাই কে একত্র করে আমরা লালমাটিয়া স্কুলের নেতৃত্বে মিছিল নিয়ে গেলাম বঙ্গবন্ধু ভবনে।

৩২ সে ঢুকার মুখেই কামাল ভাইয়ের সাথে দেখা। উনাকে আমাদের সাথে যেতে অনুরোধ করতেই বললেন: "আব্বার সামনে আমি ভয়ে যাইনা, তোরা যা। সব বলবি ভালো করে।"

কয়েক শত মেয়ে নিয়ে আমরা যখন হাজির হলাম তখন বঙ্গবন্ধু বেরিয়ে এলেন গেটের বাইরে।


প্রথমেই অবাক হয়ে বলে উঠলেন:
" হায় হায় তোরা করছোস কি ! এতো ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে তোরা এতদূর আসছিস ! যদি কেউ হারিয়ে যায় গাড়ির নীচে পড়ে !! "

তৎক্ষনাৎ পুলিশদের ডেকে বললেন মিছিলের সামনে পেছনে ব্যারিকেড দিতে। একটি বাচ্চাও যেনো বাইরে না যায়। আর কাজ শেষে পুলিশ অবশ্যই যেনো তাদের নিজ নিজ স্কুলে পৌঁছে দেয়।

তখন মনে হলো এই জন্যই তিনি জাতির পিতা, মানুষ কে আপন করে ভালোবাসার জন্যই তিনি মহান নেতা। এখন বুঝি আমাদের আসলে ভালো মন্দ বুঝার মতো বয়স ও তখন হয়নি। আর নেতারাও হয়তো উত্তেজনায় ভুলেই গিয়েছিলেন এসব সতর্কতা। 

যাক বঙ্গবন্ধু বললেন," আমি তো বলেছি বিষয়টা দেখবো। পাগল..... তোরা আবার কেনো সবাই কে নিয়ে আসলি। "



তার পর তিনি আমাদেরকে কুশলাদি জানতে চাইলেন। বললেন এখন অফিসে যাবো তোদের আর মিছিল নিয়ে আসতে হবেনা। নেতৃস্থানীয় কয়েকজন আসলেই হবে।

হঠাৎ দেখলাম আমি যখন দীর্ঘদেহী সুদর্শন বঙ্গবন্ধুর সাথে উপর


দিকে তাকিয়ে কথা বলছি, তখন ক্লাস সেভেনের দুষ্ট প্রিসিলা নিচে বসে বঙ্গবন্ধুর পায়জামা ধরে কি যেনো করছে 😊 !!
আমিতো বঙ্গবন্ধু প্রশ্নের উত্তর দিতেই ব্যস্ত।

এসময় বঙ্গবন্ধু বারবার এদিক ওদিক দেখছিলেন। বিষয়টি বেশ পরে বুঝেছিলাম।আর আমাদের ছাত্রলীগের নেতারা কেউ দেয়ালের আড়ালে কেউ গাছের আড়ালে লুকচ্ছিলেন 😊

বঙ্গবন্ধু বিদায় নিয়ে অফিসে চলে গেলেন। পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা আমাদের (গার্ড অফ অনার 😀) মানে পাহারা দিয়ে স্কুলে পৌঁছে দিলেন। প্রাথমিক বিজয়ে আমরা মহা আনন্দিত।

চলবে-------- 

শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু : (পর্ব ৯)

 

শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু : (পর্ব ৯)

স্কুলে ফিরেই প্রিসিলা কে জিজ্ঞেস করলাম তুমি নীচে বসে বঙ্গবন্ধুর পায়জামা ধরে কি করছিলে ?
ওর সাদা মাটা উত্তর আমি বঙ্গবন্ধুর পায়জামা ধরে দেখছিলাম উনি কি আমাদের মতোই কাপড় পরেন নাকি অনেক দামি কিছু। বললাম তো কি দেখলে ?


হতাশ সুরে বললো না আমাদের মতোই পপলিন কাপড়ের পায়জামা। ভেবেছিলাম দামি কিছু হবে হয়তো। ওর উত্তর শুনে সবাই হেসে গড়াগড়ি।

এর সপ্তাহ খানেক পরেই বিভিন্ন দাবীতে সারা দেশ জুড়ে প্রায় দুই মাস শিক্ষক ধর্মঘট শুরু হলো। নিরুপায় হয়ে আমি পারভীন ডাবলু ভাইকে নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে, স্কুলের আসে পাশের লোকজন থেকে জিজ্ঞাসা করে করে জেনে ক্লাস নাইন ও টেনের ছাত্রীদের আমাদের আন্দোলনে শরিক করতে শুরু করলাম। শেখ কামাল ও ছাত্রলীগ সাথে আছে শুনলে ছাত্রী ও অভিবাবকগণ ও রাজি হতেন।

এভাবে আমরা ঢাকার বেশ কিছু গার্লস স্কুলের ছাত্রীদের সংগঠিত করেছিলাম। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আজিমপুর গার্লস হাই স্কুল, ধানমন্ডি গার্লস হাই স্কুল, কামরুন নেসা গার্লস হাই স্কুল, লেক সার্কাস গার্লস হাই স্কুল, উদয়ন হাই স্কুল, সিদ্দেশরী গার্লস হাই স্কুল, টালী অফিস গার্লস হাই স্কুল, মোহাম্মদপুর গার্লস হাই স্কুল ও লালমাটিয়া গার্লস হাই স্কুল।

এক পর্যায়ে এই শিক্ষক ধর্মঘটের মধ্যেই আমরা একদিন বেশ কজন মিলে বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করতে তৎকালীন গণভবন বর্তমান সুগন্ধায় গেলাম। কিন্তু ভারতের ইন্দিরা গান্ধীর বিশেষ দূত ডি পি ধর এসেছিলেন বলে সেদিন আর আমাদের ঢুকতে দেয়া হলোনা।

এর দু তিন দিন পরেই আমরা আবার একদিন সকালে গেলাম গণভবন। মজার বিষয় হলো টাকা পয়সা না থাকায় আমাদের যাতায়াতের বিষয়টি বেশ ইন্টারেস্টিং ছিল 😋। স্কুল ড্রেস পরা ৪-৫ টা মেয়ে হটাৎ যদি রাস্তায় দাঁড়িয়ে কারো গাড়ি থামিয়ে বলে আমাদের কি একটু গণভবনে নামিয়ে দেবেন ! অবাক হলেও যে কেউ মনে হয় এখনো এই উপকার টা সানন্দে করবেন। তবে আমাদের সৎ সাহস ছিল বলতেই হয়। ( কিছুটা মাস্তানি অবশ্য ছিল এটাও বলা যায় 😀)।

সুগন্ধার গেট থেকে বলে দিল বঙ্গবন্ধু মিটিং এ বিকেল ছাড়া দেখা হবেনা। আমরাও না ছোড় বান্দা। আমরা সিদ্ধান্ত নিনাম আজ বিকেলে হলেও আমরা দেখা করবোই বঙ্গবন্ধুর সাথে।
আমরা সারাদিন সবাই না খেয়েই বসে রইলাম পাশের রমনা পার্কে। আমি পারভীন, আপেল, সাগর, সুইটি আর মেয়েদের নাম মনে নেই এখন আর। সাথে অবশ্য ছাত্রলীগের ডাবলু ভাই, পিন্টু ভাই, শিরাজ ভাই, রিয়াজ ভাই আরো কয়েকজন ছিলো।

বিকেল ৪ টার দিকে আমরা মেয়েরা গেটে গিয়ে দাঁড়ালাম। বঙ্গবন্ধু গাড়িতে করে বের হচ্ছিলেন। গেট খুলতেই আমাদের দেখে গাড়ি থামিয়ে তিনি নেমে এলেন।
জানতে চাইলেন " কি খবর তোরা কখন এসেছিস "।
সকালে- বলতেই বললেন
"সারাদিন তোরা কোথায় ছিলি "
রমনা পার্কে - বলতেই বললেন "মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে তোরা কিছু খাসনি। চল আমার সাথে। আমি সংসদ অধিবেশনে যাচ্ছিলাম। আয় আমার সাথে।"

বলেই বঙ্গবন্ধু আমাদের নিয়ে আবার সুগন্ধা মানে গণভবনে ঢুকলেন। হাক ডাক শুরু করে দিলেন। "এই এদের আগে কিছু খেতে দে।"

তারপর রুমের ভেতর দাঁড়িয়েই আমাদের সাথে কথা বলতে লাগলেন।
মাথায় হাত রেখে বললেন-
"এই তুই কোন ক্লাসে পড়স ?
আমি টেন বলতেই বললেন- "তো তোর কি। সমস্যা তো অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্রীদের।"
ঝটপট জবাব দিলাম- ওরা তো ছোট। আমরা বড়রা না দেখলে ওরা কি পারবে।
গম্ভীর স্বরে বললেন - " হুমম।

আমি তো ইউসুফ আলীকে বলে দিয়েছি।"
আমার জবাব ছিলো- আমরা কাউকে চিনিনা বঙ্গবন্ধু, আমরা আপনাকে চিনি আমরা আপনার কাছেই আসবো। সবাই সমস্বরে বকতে লাগলো কথাগুলো।

এবার বঙ্গবন্ধু একটু বিমোর্ষ চিন্তিত হয়ে জবাব দিলেন- " সবাই বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধু করো, বঙ্গবন্ধুর কাছে কি যাদু আছে। দেশে কত সমস্যা। রাতে ঘুমাতে পারিনা চিন্তায়। কিভাবে দেশ


চালাবো"

এমন আরো কিছু কথা যেনো নিজের মনেই বললেন। অনেক পরে বড় হয়ে বঙ্গবন্ধু কে বুঝেছিলাম, বঙ্গবন্ধুর কষ্টের কথাগুলি অনুধাবন করতে চেষ্টা করি আজও 😥

কঠিন কথাগুলো না বুঝেই বললাম বঙ্গবন্ধু আপনি বলেন তো আইয়ুব খান যদি এটা করতো তবে আপনি তো সবার আগে প্রতিবাদ করতেন।
বঙ্গবন্ধু হেসে বললেন- "তোদের এই কথাগুলো কে শিখিয়ে দেয় বলতো।"
কেউ শেখায় না আমরা তো আপনার কাছ থেকেই শিখেছি।
হটাৎ বঙ্গবন্ধুর নজর গেলো জানালার বাইরে ছাত্রলীগের নেতাদের দিকে। তিনি হেসে হাতের ইশারায় ডেকে বললেন- "ও নাটের গুরু তা হলে তোমরাই, এবার বুঝলাম। আসো আসো ভেতরে আসো।"
সবাই ভেতরে এলো।

চলবে -----

শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু : (পর্ব ১০)

 শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু : (পর্ব ১০)


বঙ্গবন্ধু কতো উদার কতো বিশাল হৃদয়ের মানুষ ছিলেন যা হয়তো আমাদের অনেকেরই বোধ বুদ্ধি বিবেচনা ও কল্পনার বাইরে।
বঙ্গবন্ধু কে ধারণ করা তাঁর আদর্শ মহানুভবতা অনুসরণ করা সকলের পক্ষে সম্ভব নয়। অসাধারণ চারিত্রিক দৃঢ়তা,স্বরণ শক্তি ও মানবিক গুণাবলীই উনার মুজিব ভাই থেকে বঙ্গবন্ধু, সেখান থেকে জাতির পিতা হয়ে উঠার অন্যতম কারণ।

আর তেমনি একজন পিতার গর্বিত সন্তান দৃঢ় চরিত্রের বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল পিতার সিদ্ধান্তের বিপরীতে কথা বলতেও পিছ পা হননি।

আজকের গ্লোবাল নেটওয়ার্ক এর এই রাজনীতিতে আমরা এমন কয়টি উদাহরণ দেখতে বা দেখতে পারবো জানিনা। খোদ জাতির পিতা প্রধানমন্ত্রী তাঁর নিজের দলের ছাত্র সংগঠনের উনার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করা দেখেও বুঝেও উদার হাসি দিয়ে তা মেনে নিলেন !! 👌

তেমনি ভাবে কোন প্রধানমন্ত্রী পুত্র সেই আন্দোলন গড়ে তোলার সাহস ও সক্ষমতা দেখতে পারবেন !

তৎকালীন গণভবনে অর্থাৎ সুগন্ধায় বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগের নেতাদের দেখেও শুধু হেসে "ওহ তোমরাই নাটের গুরু" কথাটি ছাড়া আর কিছুই বললেন না।

আমাদের নির্দেশ দিলেন -
"তোরা আর কষ্ট করে আসবি না আমার কাছে। তোদের নেতা শেখ শহীদ আছে, তার সাথে যোগাযোগ করে খবর জেনে নিবি।"

তারপর আমাদের খাওয়া দাওয়া শেষে গণভব

নের গাড়ী করে পৌঁছে দেবার নির্দেশ দিয়ে তিনি সংসদের উদ্দেশ্যে বিদায় নিলেন।

বঙ্গবন্ধু জাতীয় পিতা দেশের প্রধানমন্ত্রী, তিনি সংসদে না গিয়ে ওই মুহূর্তে গাড়ি থেকে নেমে আবার আমাদের নিয়ে সুগন্ধায় ঢুকলেন, আমাদের খাবার দেবার নির্দেশ দিলেন, কথা বললেন, আমাদের আশ্বস্ত করলেন তিনি কিছু একটা অবশ্যই করবেন আমাদের যাতে বাড়ি পৌঁছাতে কোন অসুবিধা না হয় সরকারী গাড়িতে পৌঁছে দেবার নির্দেশ দিলেন।


আপনারা যারা পাঠক তারা কিভাবে বিষয়টি দেখছেন ভাবছেন জানিনা। আমি শুধু এটুকু বুঝি, আমি আমরা সৌভাগ্যবান, যাদের জীবনে তাঁকে এমন করে এভাবে দেখার দূর্লভ সৌভাগ্য হয়েছিলো।

বঙ্গবন্ধুর আকাশ সমান উদারতার, মহত্ত্বের, বিশালত্বের, নেতৃত্বের পরিমাপ করার যোগ্যতা দুঃসাহস কোনটি ই আমার নেই। শুধু বলবো আমরা ঋণী কৃতজ্ঞ তাঁর কাছে।
ঋণী বাংলাদেশ। 🇧🇩

এর কিছুদিন পরেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের সংগঠিত সব স্কুলের হেড মিস্ট্রেস কে তাঁর স্কুলের কারা করা আন্দোলন করছে তাদের দু একজন কে নিয়ে মন্ত্রণালয়ে ডেকে পাঠালেন। সবই গেলেও আমরা গেলাম না।
কারণ আমাদের হেড মিস্ট্রেস শ্রদ্ধেয় খাদেষ্টা আপা আমাদের না নিয়ে একাই গেলেন। উনার জবাব ছিল স্কুল বন্ধ তাই কাউকে না সম্ভব হয়নি। ( যদিও আমাদের ঠিকানা উনার জানাই ছিলো)
পক্ষান্তরে অন্য স্কুলের ছাত্রীরা তাদের শিক্ষিকার শেখানো মতে বলে আসলো, আমরা কিছুই জানিনা, সব লালমাটিয়া স্কুলের ছাত্রীরা করেছে !

দিলো আমাদের পুরো আন্দোলনের বারোটা বাজিয়ে!!

শেখ শহীদ ভাই তখন ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধুর বাসায় ই থাকতেন। আমি পারভীন প্রায়শই সেখানে যেতাম উনাকে ও কামাল ভাই কে বিষয়টি নিয়ে তাগাদা দিতে।

এদিকে ধর্মঘট শেষে স্কুল খুললো। ছাত্রীদের প্রায় ৭ মাসের বেতন বাকি পড়লো। প্রায় কদিন পর পরই নিয়মিত আমার ডাক পড়তে থাকলো হেড মিস্ট্রেস এর রুমে।

প্রশ্ন একটাই আর কতো দিন আমরা বেতন না নিয়ে অপেক্ষা করবো শুধু তোমার কথায় ?
উত্তর ও একটাই - " বঙ্গবন্ধু কথা দিয়েছেন বেতন মাফ করবেন।"
আমরা দৃঢ় বিশ্বাসী বঙ্গবন্ধু নিরাশ করবেন না। হেড মিস্ট্রেস আপার প্রচ্ছন্ন স্নেহ ছায়া ছিলো বলেই তিনি বিশ্বাস করতেন। একদিন তো অন্য শিক্ষক রা ক্ষেপে গিয়ে বললেন

- এই মেয়েটার কথায় কেন যে আপনি বিশ্বাস করছেন বুঝিনা!
দেখতে দেখতে সেপ্টেম্বর মাস শেষের পথে আমাদের মবের ভেতর ধুক করছে।

অবশেষে এলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সেই বহুল প্রত্যাশিত নোটিশ। লালমাটিয়া গার্লস হাই স্কুলের ৯ মাসের বেতন মওকুফ করা হলো। খুশিতে বিজয়ে আমরা ছাত্রীরা উচ্ছসিত আত্মহারা। সভায় স্লোগান তুললো :

জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।

বঙ্গবন্ধু তাঁর কথা রেখেছেন। দেশের হাজার লক্ষ সমস্যার মাঝে জাতির পিতা ভুলে যাননি এতো ক্ষুদ্র নগণ্য আমাদের। এখানেই বঙ্গবন্ধু অসাধারণ ও অনন্য উচ্চতায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী জাতির পিতা।
আমরা বিকেলে ছাত্রলীগ অফিসে ছুটলাম।

চলবে---------

শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু : (পর্ব ১১)

 

শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু : (পর্ব ১১)

আমাদের বিজয়ে ছাত্রলীগ অফিসে সবাই আনন্দিত উল্লসিত হলো, মিষ্টি খাওয়া হলো। আমরা আমাদের চার মাসের অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য হলাম প্রশংসিত।

"বঙ্গবন্ধু" আমাদের দাবী পূরণ করেছেন এর চাইতে আর বড় পাওয়া আর কি হতে পারে!

এই ঘটনাটি আমার জীবনের অন্যতম একটি আনন্দের সাফল্যের ও চমৎকার ঐতিহাসিক একটি ঘটনা বলেই আমি মনে করি। যা অনন্য অসাধারণ মধুর স্মৃতিময়।

আজ এতো গুলো বছর পরেও বঙ্গবন্ধুর সেই পিতৃস্নেহের স্নেহ মাখা হাত যেন আমার মাথায় ছুঁয়ে আছে আজও।

আমাদের প্রিয় নেতা কমান্ডার শেখ কামাল ভাইয়ের ও ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব শেখ শহিদুল ইসলাম ভাই এবং সিটি ছাত্রলীগের সার্বিক সাহায্য ও সহযোগিতা না থাকলে আমরা কিছুতেই এই সাফল্য অর্জন করতে পারতামনা।
বঙ্গবন্ধু পর্যন্ত হয়তো পৌঁছানোর দুঃসাহস ও হয়তো আমাদের হতো না।

(যদিও আমরা দেশ ব্যাপী মাধ্যমিক শিক্ষক ধর্মঘট ও অন্য স্কুলের ছাত্রীদের বোকামি সার্বিক পরিস্থিতির কারণে সবটা দাবি আদায় করতে পারিনি। )

আমি আজ নির্দ্বিধায় বলতে পারি বঙ্গবন্ধুর তুলনা বঙ্গবন্ধু ই। কিন্তু যদি ১৫ আগস্ট এর নির্মম হত্যাযজ্ঞের পরে শুধু শেখ কামাল ভাই ও বেঁচে যেতেন, তবে এই বাংলাদেশের রূপ হতো অন্য রকম। সমৃদ্ধ হতো বাংলাদেশ এগিয়ে যেতো বহুদূর।


অথচ এই মহান দেশপ্রেমিক মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন মেধাবী নিরহংকারী শেখ কামালের বিরুদ্ধে জঘন্যতম সব অপপ্রচার চালানো হয়েছে দেশী বিদেশী স্বাধীনতা বিরোধীদের কূট চক্রান্তে। আর সেই পালে হওয়া দিয়েছে আগুনে ঘি ঢেলেছে তৎকালীন জাসদ।

সিরাজ শিকদারের সর্বহারা পার্টিকে পাহারা দিতে গিয়ে দুর্ঘটনা বসত কামাল ভাই ও তার বন্ধুরা পুলিশের গুলিতে আহত হলেন। যার মধ্যে বর্তমান বি, এন, পি, নেতা টুকুও ছিলেন।

পরের দিন জাসদের পত্রিকা " গনকণ্ঠ " হেড লাইন করলো বাংলাদেশ ব্যাংক ডাকাতি করতে গিয়ে শেখ কামাল আহত!! কালিমা লেপনের চেষ্টা করা হয়েছে শেখ কামাল ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের প্রতি। যার রেশ চলছে দুর্ভাগ্য জনকভাবে আজও।

আজকের প্রজন্মের কাছে আমার প্রশ্ন,

*) কোথাও কখনো ব্যাংকের ভোল্ট ভেঙে ডাকাতি হতে শুনেছেন ?
*) বাংলাদেশ ব্যাংক এর সেফটি ভোল্ট ভাঙা কি খুব সহজ কাজ ?
সেক্ষেত্রে তো মনে হয় শেখ কামাল রাইফেল নয় ট্যাংক নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল।
*) জাতির পিতা প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর পুত্র কে কি টাকার জন্য ব্যাংক ডাকাতি করতে হয় ?

উনি চাইলেই তো তার এক কথায় লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করতে পারতেন বৈধ অবৈধ পথেই।
জাতির দুর্ভাগ্য আমরা তা বিশ্বাস করেছি অন্ধের মতো।

সে সময়ে ছাত্রলীগের "পদক্ষেপ" নামে একটি মাসিক মুখপত্র ছিলো। শেখ কামাল ভাই সেটির ও সার্বিক দেখা শুনা করতেন।

চলবে---------

Thursday, September 10, 2020

শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু : ( পর্ব ১) Advocate Nazma Kawsar

শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু : ( পর্ব ১) 

https://www.facebook.com/nazma.a.kawsar

নিজেকে সৌভাগবান মনে করি কারণ, আমি শেখ কামাল এর হাতে গড়া কর্মী বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ধারক বাহক, ও হৃদয়ে লালন করি ধারণ করি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শ। ভালোবাসি আমার বাংলাদেশ কে।

সময়ের সাহসী সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল ছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর প্রথম ব্যাচের ক্যাডেট অফিসারদের একজন। ১৯৭১ সালের ৯ অক্টোবর তাঁদের পাসিং আউট হয়। এরপর সেকেন্ড লেফট্যানেন্ট হিসেবে শেখ কামাল, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এমএজি ওসমানীর এডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মুক্তিযুদ্ধের শেষে কিছুদিন পর তিনি সেনাবাহিনী ত্যাগ করেন এবং পুনরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র জীবনে ফিরে যান। সেখান থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।

যিনি অস্র ছেড়ে কলম হাতে নিয়েছিলেন, হাতে তুলে নিয়েছিলেন প্রিয় "সেতার" টা আবার। গড়ে তুলেছিলেন "আবাহনী ক্রীড়াচক্র" যা এই বাংলাদেশের ক্রীড়া জগৎ কে করেছে সমৃদ্ধ, যুব সমাজকে করেছে ক্রীড়া পারদর্শী।

সদ্য স্বাধীন দেশ ও জাতিকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ করতে যিনি নিরলস ছুটে বেড়িয়েছেন স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে।
স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও ধর্ম নিরপেক্ষতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করে নুতন দেশটিকে একটি আদর্শ সুখী সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার অঙ্গীকারে নেমেছিলেন নুতন লড়াইয়ে।


ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্কুল কলেজে ছাত্র ছাত্রীদের ছাত্রলীগের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তিনি।

তারই ধারাবাহিকতায় তিনি তার প্রচারণা টিম নিয়ে এলেন ঢাকার মোহাম্মদপুরের আমাদের " লালমাটিয়া গার্লস হাই স্কুলে।" গার্লস স্কুল বিধায় তিনি সরাসরি স্কুলে না ঢুকে বাইরে অপেক্ষা করছিলেন। সাথে উনার বন্ধু বরকত এ খোদা সহ মোহাম্মদপুর ছাত্রলীগের বাদল ভাই, পিয়ারু ভাই, মহিবুল ইয়াজদানী খান ডাবলু( বর্তমানে সুইডেন প্রবাসী) আব্দুস সামাদ পিন্টু ও লালমাটিয়া ছাত্রলীগের সৈয়দ সিরাজুদ্দীন কে নিয়ে।
অথচ প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু পুত্র চাইলে যখন তখন স্কুলে ঢুকতে পারতেন। কিন্তু সেই ভদ্রতা ও সভ্যতার শিক্ষা উনার ছিলো প্রবল।

স্কুলের ভেতরে আসলেন উনার বিশ্ববিদ্যালয়ের টিমের রাশিদা খানম আপা ও আব্দুল কুদ্দুস মাখন ভাবে স্ত্রী হাসু আপা সহ কয়েকজন। উনারা টিফিন টাইমে আমাদের নিয়ে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি, ছাত্র লীগের আদর্শ উদ্দেশ্য সম্পর্কে ও সদ্য স্বাধীন দেশ গঠনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে কাজ করার বিষয়ে আমাদের বুঝালেন। আমরা কজন বেশ আগ্রহ নিয়ে উৎসাহী হলাম।
দু তিন দিন উনারা আমাদের মোটামুটি প্রস্তুত করে, জানালেন হেড মিস্ট্রেস এর অনুমতি নিয়ে একদিন শেখ কামাল ভাই আসবেন স্কুলে। আমরা সকল ছাত্রীদের কে জানিয়ে দিলাম খবরটি। সবার মধ্যেই বেশ উৎসাহ উদ্দীপনা প্রধানমন্ত্রী পুত্র মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল কে দেখার ও শুনার।

অবশেষে ১৯৭২ সালের মাঝামাঝি রৌদ্র স্নাত এক দুপুরে তিনি এলেন এবং জয় করলেন সবার হৃদয়। হালকা পাতলা লম্বা সুদর্শন যুবক। অতি সাধারণ কিন্তু সবার থেকে আলাদা। দেখতে ঠিক বঙ্গবন্ধুর যুবক বয়সের ছবির মতোই অবিকল। কালো ফ্রেমের চশমা ঘন মোটা মোচ, উজ্জ্বল বুদ্ধিদৃপ্ত দুচোখের হাস্যোজ্জ্বল চাহনী। জীবনে প্রথম আমরা দেখলাম শেখ কামাল কে।

যিনি ছিলেন আপাদমস্তক একজন দক্ষ সংগঠক ও আদর্শ দেশপ্রেমিক। তিনি বললেন বোঝালেন ব্যাখ্যা করলেন দেশের প্রতি আমাদের দায়িত্ব কর্তব্য ও বর্তমান প্রেক্ষাপটে ছাত্রলীগের আদর্শ উদ্দেশ্য।নিজেদের কে একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা।

আমরা ছাত্রীরা মুগ্ধ বিমোহিত হলাম উনার বক্তব্যে, দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হলাম। নিজেদের মনে হচ্ছিল আমরাই এক এক জন নুতন দেশ গড়ার লড়াইয়ের বীর সৈনিক!

তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে আমাকে সভাপতি ও পারভীন সুলতানা কে সাধারণ সম্পাদক করে লালমাটিয়া গার্লস স্কুল শাখা ছাত্রলীগ এর সংক্ষিপ্ত কমিটি গঠন করা হলো।

চলবে.....

শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু : ( পর্ব ২)

 

শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু : ( পর্ব ২)

লালমাটিয়া গার্লস স্কুল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হবার পর আমি আর পারভীন তো মহানেতা বনে গেলাম। শেখ কামাল ভাই ও অন্যদের স্নেহ সেই ক্লাস এইটে নাইনে পড়া আমাদের মাঝে প্রচন্ড আত্মবিশ্বাস উৎসাহ ও দেশপ্রেম সৃষ্টি করলো।


আমরা প্রায়শই ছুটির দিনে ছাত্রলীগ অফিসে বিভিন্ন মিটিং এ যাতায়ত শুরু করলাম। ছাত্রলীগ অফিসে তখন ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের উল্টা পাশে ৩০ নম্বর মিরপুর রোড। যা বর্তমানে জনতা ব্যাংক। নিচ তলায় ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের ও দোতলায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ অফিস।
শেখ শহীদুল ইসলাম ভাই তখন ছাত্রলীগের সভাপতি। ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগে সৈয়দ নুরু ভাই ও মমতাজ ভাই দায়িত্বে। ওবায়দুল কাদের ভাই কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক ছিলেন।

যাক সবার আদর স্নেহ আমাদের মাঝে প্রত্যয় ও দৃঢ়তা, সাহস আরো বাড়িয়ে দিল। নিজেদের অনেক বড় বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক মনে করতাম। ওই বয়সে স্বাভাবিক ভাবেই যা হয়। এখন বুঝি ঢাকা শহরে একমাত্র স্কুল থেকে আমরা দুজনই যেতাম বলেই হয়তো সবাই অনেক বেশি স্নেহ করতেন।

শেখ কামাল ভাই তখন দেশ পুনর্গঠনে ও ছাত্রলীগ কে সংগঠিত করা, উনার আবাহনী ক্রিয়াচক্র কে এগিয়ে নেয়া , বিভিন্ন সামাজিক কাজ কর্মে সহ ছায়ানট এর সাংস্কৃতিক চর্চা ইত্যাদি নিয়ে মহা ব্যস্ত। আবাহনী ক্রিয়াচক্র প্রতিষ্ঠা করে তিনি আধুনিক ফুটবল খেলায় নব জাগরণ তৈরি করেছিলেন। প্রিয় আবাহনী যখন খেলায় জিততো কামাল ভাই দেখতাম ছাত্রীলীগ অফিসে সবাইকে মিষ্টি খাওয়াতেন। বঙ্গবন্ধুর খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক মনে পুত্র এই বীর মুক্তিযোদ্ধার চোখে মুখে থাকতো বিজয়ের কি প্রাণবন্ত উচ্ছাস কি নির্মল উল্লাস।

তবে সকল ব্যস্ততার কেন্দ্রবিন্দু দেশ পুনর্গঠন ও সংগঠন কে শক্তিশালী করে গড়ে তোলা। আনুষ্ঠানিক কোনো নেতৃত্বে না থেকেও তিনি পরম স্নেহ আদরে আগলে রাখতেন প্রতিটি নেতা কর্মীকে। খুঁজে রাখতেন জানতে চাইতেন সবার সমস্যা ও অসুবিধার কথা। বাবার সুযোগ্য পুত্রের মতোই প্রকৃত নেতার অসাধারণ সব গুণাবলী ছিলো উনার চরিত্রে। অত্যন্ত মেধাবী ও অনন্য সংগঠক, তুখোড় বক্তাও ছিলেন তিনি। উনার আচার আচরণ ছিলোনা খুব সাধারণ, বঙ্গবন্ধুর পুত্র বলে কোনো উদ্যত্ব দাম্ভিকতা কখনো দেখিনি উনার মাঝে। অত্যন্ত মিস্টিভাষী ও মিশুক প্রকৃতির একজন নিরঅহংকার সাহসী তরুণ।

অনেক স্মৃতির মাঝে একটা অসাধারণ স্মৃতি উনাকে নিয়ে না বললেই নয়। ১৯৭৩ এর ডিসেম্বর মাসে সম্ভবত ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সম্মেলন ছিলো রমনা গ্রিনে। বঙ্গবন্ধু প্রধান অতিথি। সারাদিনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শেষে সন্ধ্যায় ইঞ্জিনিয়ারস ইনস্টিটিউট এ সম্মেলনের মূল পর্বে। অর্থাৎ কমিটি গঠনের পালা। বিভিন্ন স্কুল কলেজ এর সভাপতি সাধারণ সম্পাদকরা কাউন্সিলর। তাদের নিয়েই সাবজেক্ট কমিটি।

ছাত্রলীগের ঐতিহ্য অনুসারে প্রথমে আলোচনা ও সমঝোতার ভিত্তিতে কমিটি করার চেষ্টা করা হলো। তা না হলে কাউন্সিলরদের ভোটে নির্বাচন দেয়ার বিধান। আর সে কারণেই বিভিন্ন স্কুল কলেজের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কে থাকতেই হলো। রাত প্রায় নয়টা সাড়ে নয়টা বেজে গেলো। বাসায় পৌঁছানো ও বকা খাওয়ার ভয়ে আমরা আতঙ্কিত। এখনকার মত ছিলোনা কোনো টেলিফোন সুবিধা তাই বাসায় সবাই চিন্তিত থাকবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কাউন্সিল কোনো ঐকমত্যের সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে পারছেনা। রাত গভীর হচ্ছে।

১৯৭৩ সালের ওই সময়টায় জাসদের গণবাহিনী ও সিরাজ শিকদারের সর্বহারা পার্টির ত্রাস চতুর্দিকে। শহরময় আতংক। ছিনতাই হচ্ছে, হাইজ্যেক হয়ে যাচ্ছে মেয়েরা। সন্ধ্যার পরেই প্রায় রাস্তা ঘাট জনশূন্য হয়ে যায়। সমস্ত দোষ ছাপানো হচ্ছে ছাত্রলীগের ঘাড়ে। শেখ কামাল নামে নানা কুৎসা রটনায় সিদ্ধহস্ত জাসদের মুখপত্র "গনকণ্ঠ"। এহেন কুৎসিত কথা ও জঘন্য মিথ্যাচার নেই যা করা হয়নি শেখ কামাল ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের বিরুদ্ধে। তার উপর ছিল মাওলানা ভাসানী " হক কথা" পত্রিকা !

জাসদ কায়েম করতে চাচ্ছে হাস্যকর বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র ☺️ 😊!
সিরাজ শিকদারের সর্বহারা পার্টি শ্রেণী শত্রু খতমের নামে করছে খুন খারাপি 😥😪 ! বাংলাদেশ নিয়ে তিনারা খুশি নয় কায়েম করবেন স্বাধীন পূর্ব বাংলা 😡 !!
তার উপরে স্বাধীনতা বিরোধী চক্র তাদের পাকিস্তানি ও মার্কিনী প্রভুরা তো আছেই ষড়যন্ত্রে সক্রিয়।

এমন একটি ভয়ানক পরিস্থিতি তে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে সদ্য স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধু সরকার বেশ বেকায়দায়। খুন হোচ্ছেন একের পর এক জনপ্রতিনিধি এম পি। ডুবে যাচ্ছে বা ডুবিয়ে দেয়া হচ্ছে খাদ্যের লবণের জাহাজ। আগুন লাগাচ্ছে পাটের গুদামে গম চালের গুদামেও আগুন !
যাক সেদিনের কথাই বলি। অবশেষে সিদ্ধান্ত হলো কয়েকজন যাবেন বঙ্গবন্ধুর কাছে এবং তিনি যাদের নেতা বানাবেন সবাই তা মেনে নেবেন।
এখন সমস্যা হলো এমন একটি ভয়াবহ পরিস্থিতি তে আমরা মেয়েরা যার যার বাসায় কিংবা হোস্টেলে ফিরবো কি করে। তখন রাত নয়টা দশটা মানেই অনেক রাত। অনাদের তো কান্না কাটির দশা। কি হবে এখন।

নেতৃবৃন্দ অভয় দিয়ে বললেন উনারাই পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু উপস্থিত কেউ ই সাহস পাচ্ছিলেন না এতগুলো মেয়েকে নিয়ে রাস্তায় বের হতে। জাসদ কিংবা সর্বহারা পার্টি একটা অঘটন ঘটাতে পারে। পাঠক একটি বার ভাবুন অনুমান করতে চেষ্টা করুন, ৭৩-৭৪ সালের সদ্য স্বাধীন বিধ্বস্ত বিপর্যস্ত দেশটিতে এরা কি ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলো। দেশ পুনর্গঠনে অংশ গ্রহন দূরের কথা উপরন্তু সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে দেশের মানুষ কে কষ্ট দিয়ে,পদে পদে বঙ্গবন্ধু কে বদনাম করতে। আজ এরাই সভার অনেকেই দেশপ্রেমিক সেজে বড় কথা বলছেন !

অবশেষে সবাই বললো শেখ কামাল ভাইকে খোঁজ। উনি কোথায় আছেন দেখে উনাকে বিষয়টি জানানো দরকার। একমাত্র বঙ্গবন্ধু পুত্রের পক্ষেই এটা সম্ভব। লোক পাঠানো হল কামাল ভাইকে আনতে।

চলবে ..........

শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু : ( পর্ব ৩)

 

শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু : ( পর্ব ৩)

সংবাদ পেয়ে শেখ কামাল ভাই সেই ডিসেম্বর এর শীতের রাতে তাৎক্ষণিক ছুটে এলেন একটা মাইক্রোবাস নিয়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে। ততক্ষনে প্রায় রাত দশটা বাজে। সে সময়টায় এটা অনেক রাত বলেই ববেচিত হতো। আমরা স্কুল কলেজের প্রায় ১২-১৪ জন মেয়ে ছিলাম।

কামাল ভাই আমাদের নিয়ে প্রথমেই গেলেন ইডেন কলেজ ছাত্রী হোস্টেলের নেত্রীদের নামাতে। যতদূর মনে পড়ে সেখানের ছিলেন ফজিলাতুন নেসা ( বর্তমান প্রতি মন্ত্রী ) আরজু আপা ( ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি সম্ভবতঃ) বেবী আপা, সুশু আপা ( বাঘা কাদের সিদ্দিকীর বোন বর্তমানে কানাডা প্রবাসী )। উনি নিজে গিয়ে অথরিটির সাথে কথা বলে উনাদের নামিয়ে দিলেন।
মোহাম্মদপুরে আমি ও পারভীন সুলতানা ( লন্ডন প্রবাসী ) কে নামানোর পথে অন্য অনেক কেই তাদের বাসায় নামিয়ে দিয়ে এলেন। লালমাটিয়া গার্লস কলেজের নেত্রীদের নামালেন তাদের হোস্টেলে। বলে আসলেন কর্তৃপক্ষকে বকা না দেয়ার জন্য।

অবশেষে এলেন আমাকে নামিয়ে পারভীন কে মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ড এর কলোনিতে নামাতে যাবেন। আমি তখন শংকর জাফরাবাদে আমার নানার বাসায় থাকি। মামারা দুজনেই মনি সিংহ এর কমিউনিস্ট পার্টি ও ন্যাপ (মোজাফ্ফর) রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। আমি তবুও বকা খাওয়ার ভয়ে দোয়া কালাম পড়ছি।

শেখ কামাল ভাই আমাকে নিয়ে নেমে দরজায় নক করলেন। নানাভাই দরজা খুললেন, আমি আস্তে করে "বললাম নানা ভাই'। অবাক হয়ে দেখলাম, কামাল ভাই নানাভাইকে সালাম দিয়ে দুই হাত জোড় করে বললেন, -

" নানা আমি শেখ কামাল। প্রথমেই আমি হাত জোড় করে ক্ষমা চাইছি আপনার কাছে। সম্মেলনের প্রয়োজনে আমরাই ওদের এতোক্ষণ রেখে দিয়েছিলাম। দয়া করে বকা দিবেন না আশা করি। দোষ আমাদেরই। তাই আমি নিজেই দিতে এসেছি। আমাকে বকা দিন।"

আলীগড় থেকে সুশিক্ষিত আধুনিক মনস্ক আমার নানাভাই ( কাজী সাদ উল্লাহ ) হেসে উনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। আবার ও সালাম দিয়ে কামাল ভাই বিদায় নিলেন।

এই ছিলেন আমাদের নেতা আমাদের কমান্ডার আমাদের রাজনৈতিক গুরু বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য জ্যৈষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল। বিনয়ী নম্র নিরহংকারী একজন বড় মাপের মানুষ।

আজকের দিনে রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী পুত্রের কাছে এমন ব্যবহার ও দায়িত্ব জ্ঞান আশা করাও দুঃস্বপ্ন মাত্র। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু পুত্র শেখ কামাল এর কি এমন দায় ছিল সেই রাতে আমাদের বাড়ী বাড়ী পৌঁছে দেয়ার! এটা তো উনার দায়িত্ব ছিলোনা, কিংবা কেউ তো উনাকে কৈফিয়ত ও নেবে না !

হ্যা উনার দায়বদ্ধতা ছিলো দেশের প্রতি, মানুষের প্রতি,সংগঠনের প্রতি, এদেশের তরুণ প্রজন্মের প্রতি। কারণ তিনি মুক্তিসেনা। এদেশ কে ভালোবেসে তিনি মা ভাই বোন কে বিপদের মুখে ফেলেও অস্র তুলে নিয়েছিলেন দেশের স্বাধীনতার জন্য। উনার নিজস্ব কর্তব্যবোধ ও দায়িত্বশীলতার জন্যই তিনি নির্দ্বিধায় অনেক দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিতেন। সকল বিপদে আপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন নিঃসংকোচে। প্রধানমন্ত্রী পুত্র হিসেবে কোনো অহংকার উন্নাসিকতা কখনোই উনাকে স্পর্শ করেনি।

অথচ সমালোচক ও প্রতিপক্ষ বঙ্গবন্ধু কে বিতর্কিত করতে প্রথমেই বেছে নিয়েছিলো এই মেধাবী সম্ভাবনাময় বীর মুক্তিসেনাকে। এমন কোনো জঘন্য মিথ্যাচার নেই যা উনার নামে না করা হয়েছিলো।
দেশী বিদেশী চক্রের কূটচাল ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য পুত্রকে বিতর্কিত করতে পারলেই বঙ্গবন্ধু কে বিপদে ফেলা যাবে। এবং দুঃখজনক হলেও সত্যি তারা তা করতে পেরেছিলো যথার্থই।

চলবে.......


Wednesday, September 9, 2020

শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু : ( পর্ব ৪) এডভোকেট নাজমা কাউসার

 

শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু : ( পর্ব ৪)

১৯৭২ সালের শেষের দিকেই আমরা শেখ কামাল ভাইয়ের নির্দেশে আমাদের স্কুল শাখার সম্মেলনের আয়োজন করি। ইতিমধ্যে লালমাটিয়া গার্লস কলেজ শাখা ছাত্রলীগ ও গঠন করা হয়ে গেছে। সঙ্গত কারণেই স্কুল ও কলেজ এর সম্মেলন একসাথেই করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো।

সম্মেলনে যদিও কলেজের নাম ও ছিলো তবুও বলতে গেলে সব প্রস্তুতির ভার পড়লো আমাদের কয়েক জনের উপর। আমরা মূলত কামাল ভাইয়ের নির্দেশনা মতো লালমাটিয়ার সৈয়দ সিরাজ উদ্দিন ভাই, রিয়াজ উদ্দিন ভাই, ডাবলু ভাই, মোস্তফা ভাই ( পরবর্তীতে এডভোকেট ) মাসুম, আমি ও পারভীন মিলে অক্লান্ত পরিশ্রমে একটি চমৎকার সফল সম্মেলন করতে পেরেছিলাম। কার্ড ছাপানো থেকে প্রধান অতিথি পর্যন্ত আমাদের কনফার্ম করতে হয়েছে। আমি, পারভীন, সিরাজভাই, রিয়াজ ভাই সহ খুব ভোরে মিন্টু রোডে গিয়ে নিশ্চিত করেছিলাম মালেক উকিল সাহেব কে।

সংগঠনে বয়সের তুলনায় আমরা মনে হয় বেশ পরিশ্রমী ও সক্রিয় ই ছিলাম সে সময়। আর্থিক সহযোগিতায় ছিলেন লালমাটিয়া আওয়ামী লীগের রমিজ উদ্দিন ভাই, কাটাসুরের হাই সাহেব, শঙ্করের নাছিরুল্লাহ সাহেব। যাদের নাম কৃতজ্ঞতা ভরে স্বরণ করছি।


আমাদের লালমাটিয়া গার্লস স্কুলের দক্ষিণ পূর্ব দেয়াল ঘেসেই ছিলো ছাত্রলীগের লালমাটিয়া শাখা অফিস। যেটি এখন লালমাটিয়া স্পুটিং ক্লাব। আমরা টিফিন টাইমে ওদিকটার নিচু দেয়াল টপকে চলে যেতাম ছাত্রলীগ অফিসে। সম্মেলন উপলক্ষে বিকেলে ছুটির পরে ঘন্টা খানেক চলতো আবৃত্তি ও গানের রিহার্সেল। আজকের প্রোথিত জশা রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী মিতা হক ছিলো শিল্পীদের মাঝে অন্যতম। মিতা এতো ছোট ছিল যে ওর নিজস্ব ছোট সাইজের হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান করতো।

এছাড়াও ছিলো বন্ধু সাফিন সীমা, বন্ধু মির্জা বেবী , প্রিসিলা, সুইটি (পরবর্তীতে ফুটবলার টুটুলের বউ) বরকত ভাইয়ের বোন ( নামটি মনে করতে পারছিনা এই মুহূর্তে) সহ আরো অনেকে।

সেই সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মালেক উকিল। বিশেষ অতিথি ছাত্রলীগ সভাপতি শেখ শহিদুল ইসলাম, শেখ কামাল। নির্দিষ্ট দিলে লালমাটিয়া গার্লস কলেজের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হলো দিনব্যাপী সম্মেলন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

শেখ কামাল ভাই এমন একটি চমৎকার অনুষ্ঠান করতে পারার জন্য বিশেষভাবে আমাদের প্রশংসা করলেন। উনার নেতৃত্বে কাজ কাজ করতে পেরে আমরা আজও গৌরবান্বিত।

ইতিমধ্যেই ছাত্রলীগ অফিসে ও আমি পারভীন বেশ সুপরিচিত হয়ে গেলাম। সংগঠনে আমাদের সক্রিয়তার কারণে সবাই আমাদের পছন্দ ও স্নেহ করতেন। সিটি ছাত্রলীগে তখন উল্লেখযোগ্য ভূমিকায় ছিলেন প্রয়াত সৈয়দ নুরু, মমতাজ হোসেন, রউফ শিকদার, ইউনুস মিয়া, মোবারক হোসেন সেলিম, প্রয়াত শামীম আফজাল, কামাল মজুমদার, মহিবুল ইয়াজদানী খান ডাবলু, আবদুস সামাদ পিন্টু, জিগাতলার মুকুল ভাই, মাহবুব ভাই , মোহাম্মদপুরের পিয়ারু ভাই বাদল ভাই ইডেনের ফজিলাতুন নেসা আপা, আরজু আপা প্রমুখ।

চলবে......

শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরুঃ এডঃ নাজমা আক্তার

শ্রদ্ধে
য় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু : (পর্ব ৫)

কথায় আছে নির্মোহ সত্যি ইতিহাস লিখা হয় কমপক্ষে ৫০ থেকে ১০০ বছর পরে। এখন বোধকরি উনার বন্ধুরা এবং আমরা যারা এখনো বেঁচে আছি তাদের উচিত হবে প্রকৃত সত্য কে বলে ও লিখে যাওয়া। বাকিটা মূল্যায়ন করবে ইতিহাস।

শেখ কামাল ভাই কতটা মানবিক ও দায়িত্বশীল একজন মানুষ ছিলেন তা যারা তাঁকে দেখেননি তারা তা বুঝতে ও জানতেও পারবেন না। উনার নামে মিথ্যা অপপ্রচার ও কুৎসার আবরণে আজও ঢাকা পড়ে আছে প্রকৃত সত্য। আমরা যারা উনাকে দেখেছি উনার স্নেহধন্য ছিলাম কেবল তারাই জানি প্রকৃত অর্থে তিনি কেমন ছিলেন। 

১৯৭২ সালেই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন ২দিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় ঢাকার সারওয়ার্দী উদ্যানে। বঙ্গবন্ধু প্রধান অতিথি। বর্ণিল সাজে সেজেছে বিশাল উদ্দ্যান। দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যায় ছিলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মিত প্রামান্য চিত্র Stop Genocide.রাত হবে জেনেই আমি নানা ভাইয়ের অনুমতি নিয়ে আমার একই বয়সী খালাতো ভাই স্বপন ও পাশের বাসার বন্ধু দিপু কে সাথে নিয়ে গেলাম। আমরা তিন জনই ক্লাস নাইন এ পড়ি। ওরা দুজনেই রাজনীতি থেকে বেশ দূরে ছিলো। তাই আপাততঃ আমি ই দলনেতা। সেখানে গিয়ে আমি ছেলেদের বসার দিকের প্রথম সারিতে ওদের বসিয়ে বললাম ওখানেই বসে থাকতে। অনুষ্ঠান শেষে অথবা যাবার আগে আমি এসে ওদের নিয়ে বাসায় ফিরবো। যেনো কোথাও না যায়। হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী ভিড়ে কোথায় খুঁজবো পরে।

চমৎকার মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে মুক্তিযুদ্ধের

উপর জাহির রায়হানের প্রামান্য চিত্র। তার পরে আরো কিছু ডকুমেন্টারি দেখানো হবে। Stop Genocide শেষ হতেই রাত ৯ টার বেশি। দেরি হয়ে যাবে ভেবে আমি বাসায় ফেরার জন্য উঠলাম। কিন্তু হায় স্বপন দিপু তো নির্দিষ্ট আসনে নেই !

অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ওদের কোথাও পেলামনা। বাড়ী ফেরার দূরচিন্তায় ও ওদের প্রতি রাগে ক্ষোভে কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ মনে হলো মঞ্চের পাশে তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত কামাল ভাইকে গিয়ে বলি। উনাকে গিয়ে বলতেই আমার মলিন মুখ দেখে বললেন, "চিন্তা করিস না আমি দেখছি" ।

আমাকে মঞ্চের পাশে দাঁড় করিয়ে তিনি গিয়ে মাইকে ঘোষণা দিলেন- " দিপু স্বপন তোমারা কোথায় আছো নাজমা তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। তোমরা মঞ্চের কাছে দ্রুত চলে এসো।" দু তিন বার ঘোষণা দেয়ার পরে মহামান্য দীপক কুমার পাল দিপু আর কামরুল হাসান স্বপন হাসতে হাসতে এসে হাজির হলেন। উনারা নাকি একটু ঘুরে ফিরে দেখছিলেন চারদিকটা ! চমৎকার!

আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলাম। কামাল ভাই জানতে চাইলেন আমরা ফিরবো কি করে। রিকশায় বা স্কুটার এ ফিরবো বলতেই বললেন- "না অপেক্ষা কর আমি দেখছি।"
তিনি মোহাম্মদপুরের দিকেই যাবেন এমন একজনকে খুঁজে বের করলেন ও তাকে বললেন আমাদের নামিয়ে দিতে। তাকে বেশ ভালো করে বলে দিলেন আমাদের যেন ঠিক মতো পৌঁছে দেন। আমরা নিশ্চিন্তে সেদিন বাড়ী ফিরে ছিলাম বঙ্গবন্ধু পুত্রের আন্তরিকতায়।

আজো যখন ঘটনাটি মনে পড়ে তখন কেবলই বিস্ময়ে মনে হয়, একজন ক্ষুদ্র কর্মীর প্রতি কি ভীষণ মমত্ববোধ আর কি অসাধারণ মানবিক গুণাবলীর অধিকারী ছিলেন শেখ কামাল ভাই।

চলবে.........

শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরুঃ নাজমা আক্তার

শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু : (পর্ব ৬)

শেখ কামাল ভাই কতটা প্রতিবাদী নির্ভীক ও নিঃসংকচিত্ত ছিলেন তার একটি উদাহরণ দিচ্ছি পাঠকের বুঝার সুবিধার্থে।

আপাত দৃষ্টিতে ছোট্ট অথচ বিশাল এই সিদ্ধান্ত টি তিনি নিয়েছিলেন খোদ বঙ্গবন্ধু অর্থাৎ উনার পিতার বিরুদ্ধে ই। দেশের স্বার্থে মানুষের কল্যাণে কাজ করাই ছিল উনার মূল লক্ষ্য। আর সেই কারণেই সেনাবাহিনীর লোভনীয় চাকুরী ছেড়ে তিনি ফিরে এসেছিলেন সাধারণের মাঝে। 
১৯৭৩ সালের মে মাসের শেষ দিকে হটাৎ স্কুলে নোটিশ আসলো শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে। 
বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর পরেই অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত মেয়েদের জন্য অবৈতনিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। কিন্তু দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ক্রমশ খারাপের দিকে যাওয়ায় আপাততঃ তা স্থগিত ঘোষণা করলেন। সাথে জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ৫ মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধের নির্দেশ দিলেন শিক্ষা বোর্ড।

এই নোটিশ টি পাওয়ার পরে টিফিন টাইমে আমি পারভীন সহ বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলাম। ৫ মাসের বেতন একসাথে দেয়া অনেক ছাত্রীদের পক্ষেই সম্ভব হবেনা। কিছু একটা করতেই হবে।

তাৎক্ষণিক করিতকর্মা আমরা দুজন আমাদের সেই ঐতিহাসিক চোরাই পথে ইটের উপর ইট দিয়ে দেয়াল টপকে দেয়ালের ঠিক উল্টা পাশেই লালমাটিয়া ছাত্রলীগ অফিসে গেলাম। সেখানে সিরাজ ভাই ও রিয়াজ ভাইদের কে জানতেই উনারা বললেন কেন্দ্রে নেতাদের বিশেষ করে শেখ কামাল ভাইকে জানাতে।

স্কুল ছুটির পরেই আমরা সোজা চলে গেলাম ৩০ নং মিরপুর রোডের ছাত্রলীগ অফিসে। গিয়েই পেলাম শেখ শহীদ ভাই কে। তিনি ও একমত হলেন এবং পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে নির্দেশ জানাবেন বললেন।

শেখ কামাল ভাই ও সৈয়দ নুরু ভাই কেও আমরা জানালাম বিষয়টি। কামাল ভাই তাৎক্ষণিক ভাবেই বললেন ঢাকার বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে মেয়েদের কে বিষয়টি বুঝিয়ে ঐক্যবদ্ধ করতে। 
আর এই কাজে আমাদের সার্বক্ষণিক সাহায্য করবে আইডিয়াল কলেজের মহিবুল ইয়াজদানী খান ডাবলু , আবদুস সামাদ পিন্টু এবং ঢাকা কলেজের রউফ সিকদার, ইউনুস মিয়া ও মোহাম্মদপুর থানা ও লালমাটিয়া শাখা ছাত্রলীগ।

চলবে.......

শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু : (পর্ব ৭)

 শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু : (পর্ব ৭) ১৯৭২ - ৭৩ সাল সদ্য স্বাধীন যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি দেশ। রেলপথ, নৌপথ, রাস...