শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু : (পর্ব ৭)
১৯৭২ - ৭৩ সাল সদ্য স্বাধীন যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি দেশ। রেলপথ, নৌপথ, রাস্তা ঘাট, ব্রিজ কালভার্ট, স্কুল কলেজ ধ্বংস, ভঙ্গুর অবকাঠামো, ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থিনীতি। নেই নিজস্ব কোনো বিমান। অচল অকেজো সমুদ্র বন্দর। বন্দরে মুক্তিযোদ্ধাদের ডুবিয়ে দেয়া অসংখ্য জাহাজ ও পুঁতে রাখা মাইন। সারা দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকের হাতে ও রাজাকার, আলবদর আলশামস ও পাকিস্তানিদের ফেলে যাওয়া অস্রে সয়লাব। চুরি ডাকাতি ছিনতাই রাহাজানি বেড়ে গেছে। পাকিস্তানি দালাল ও কিছু কুচক্রীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ধান,চাল,গম, পাটের গুদামে আগুন লাগানো ও লবন গম সহ খাদ্যের জাহাজ ডুবিয়ে দেয়া ছিলো প্রায় নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার !!
হানাদার পাকিস্তানিরা সারেন্ডারের পূর্বে বিভিন্ন জেলায় এমন কি বাংলাদেশ ব্যাংক ( State Bank of East Pakisthan) এর ট্রেজারী তেও নোটের বান্ডিলে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিল।
সদ্য স্বাধীন দেশের কারেন্সি বলে কিছু ছিলোনা। কারেন্সি ছাপাতে যে অর্থের প্রয়োজন তাও নেই আমাদের। ভারত শুভেচ্ছা স্বরূপ প্রথমে কিছু টাকা চাপিয়ে দিলো। যা ছিলো অত্যন্ত নিন্মমানের কাগজের। অনেকটা লটারী টিকিটের মত। কিছুদিনের মধ্যেই বাজারে নকল টাকার ছড়াছড়ি। ফলস্বরূপ মুদ্রাস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতি! পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু সম্ভবত পূর্ব জার্মানি থেকে কারেন্সি ছাপিয়ে এনেছিলেন।
তার উপরে বাড়তি যোগ হয়েছে বিরোধী রাজনীতির নামে নৈরাজ্য খুন অরাজকতা। ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ গড়ার কথা থাকলেও তা ব্যর্থ হলো। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র, গণবাহিনী, স্বাধীন পূর্ব বাংলা, শ্রেণী শত্রু খতম, সর্বহারা ইত্যাদি নানান ভাওতাবাজি দেশে আরও জটিল অশান্তি সৃষ্টি করলো !
যা প্রকারান্তরে দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের এবং স্বাধীনতা বিরোধীদের হাত কে শক্তিশালী করে বঙ্গবন্ধু ও দেশের বিরুদ্ধে ব্যাপক চক্রান্তের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিলো।
এমনিতর একটি খারাপ পরিস্থিতি তে বঙ্গবন্ধু মেয়েদের অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা ব্যবস্থা আপাততঃ স্থগিত ঘোষণা করলেন। আর সেই ঘোষণার বিরুদ্ধে আমরা কজন কিশোরী সার্বিক অবস্থা না বুঝেই প্রতিবাদ করেছি !
কিন্তু কি আশ্চর্য এমনি পরিস্থিতিতে ছাত্রলীগের ও শেখ
কামাল ভাইয়ের অনুমতি ও সাহস সহযোগিতা আমরা পেলাম সেই আন্দোলনে! আজকের এই
নষ্ট রাজনীতির যুগে আমি ভাবতেও পারিনা সরকারের ছাত্র সংগঠন আন্দোলন করছে
সরকারের বিরুদ্ধে !!
খোদ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে !!!
আর সেখানে আড়াল থেকে উৎসাহ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবের পুত্র শেখ কামাল !!!
এটাই বোধ করি গণতন্ত্র। ব্যক্তি স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা, সাংগঠনিক এবং গণতান্ত্রিক অধিকার। যা আজকের বাংলাদেশে কল্পনায় আনতেও ভয় হয়।
পরবর্তী কালে প্রধানমন্ত্রী পুত্রদের দেখেছি বিরোধী দলকে নিস্তব্ধ নিঃশেষ করে দিতে ইতিহাসের লজ্জাজনক ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করতে কিংবা ক্রিকেট ব্যাট নিয়ে মাঠে মহড়া দিতে।
যাক মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি। আমরা পরের
দিন থেকেই নেমে পড়লাম মাঠ গোছাতে। মূলতঃ ডাবলু ভাইকে সাথে নিয়ে আমরা দুজন (
আমি ও পারভীন) বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে বিষয়টি ছাত্রীদের বুঝিয়ে তাদের অধিকার
আদায়ে আমাদের সাথে সম্পৃক্ত করতে শুরু করলাম।
লালমাটিয়া গার্লস স্কুল, মোহাম্মদপুর গার্লস স্কুল, রায়ের বাজার টালী অফিস গার্লস স্কুল, কলাবাগান লেকসার্কস গার্লস স্কুলের ছাত্রীদের আমরা প্রথম ধাপে ঐক্যবদ্ধ করলাম।
সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমরা প্রত্যেক স্কুলের তিন- চার জন মেয়েকে নিয়ে একদিন সকাল ৮ টা - সাড়ে ৮ টা নাগাদ গেলাম ৩২ নাম্বারে বঙ্গবন্ধুর বাসায়। আমরা পৌঁছাতেই গেট খুলে আমাদের ভেতরে নেয়া হলো। উল্লেখ্য বঙ্গবন্ধুর দরজা সকল বাঙালির জন্যই ছিল উম্মুক্ত। বঙ্গবন্ধু মেয়েদের কথা শুনে বেরিয়ে এলেন সামনের বারান্দায়।
সেই মুহূর্তের আবেগ ও শ্রদ্ধা
মিশ্রিত অনুভূতি আজও চোখের সামনে ভেসে বেড়ায়। জীবনে প্রথম এত কাছ থেকে
দেখছি জাতির পিতাকে। আমরা টুপ টুপ করে পা ধরে সালাম করলাম সবাই। বঙ্গবন্ধু
মাথায় হাত বুলিয়ে স্বভাব সুলভ ভাবে জিজ্ঞেস করলেন-
" কিরে কি সমস্যা তোদের ?"
চলবে-------