শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু : (পর্ব ৯)
স্কুলে ফিরেই প্রিসিলা কে জিজ্ঞেস করলাম তুমি নীচে বসে বঙ্গবন্ধুর পায়জামা ধরে কি করছিলে ?
ওর সাদা মাটা উত্তর আমি বঙ্গবন্ধুর পায়জামা ধরে দেখছিলাম উনি কি আমাদের মতোই কাপড় পরেন নাকি অনেক দামি কিছু। বললাম তো কি দেখলে ?
হতাশ সুরে বললো না আমাদের মতোই পপলিন কাপড়ের পায়জামা। ভেবেছিলাম দামি কিছু হবে হয়তো। ওর উত্তর শুনে সবাই হেসে গড়াগড়ি।
এর সপ্তাহ খানেক পরেই বিভিন্ন দাবীতে সারা দেশ জুড়ে প্রায় দুই মাস শিক্ষক ধর্মঘট শুরু হলো। নিরুপায় হয়ে আমি পারভীন ডাবলু ভাইকে নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে, স্কুলের আসে পাশের লোকজন থেকে জিজ্ঞাসা করে করে জেনে ক্লাস নাইন ও টেনের ছাত্রীদের আমাদের আন্দোলনে শরিক করতে শুরু করলাম। শেখ কামাল ও ছাত্রলীগ সাথে আছে শুনলে ছাত্রী ও অভিবাবকগণ ও রাজি হতেন।
এভাবে আমরা ঢাকার বেশ কিছু গার্লস স্কুলের ছাত্রীদের সংগঠিত করেছিলাম। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আজিমপুর গার্লস হাই স্কুল, ধানমন্ডি গার্লস হাই স্কুল, কামরুন নেসা গার্লস হাই স্কুল, লেক সার্কাস গার্লস হাই স্কুল, উদয়ন হাই স্কুল, সিদ্দেশরী গার্লস হাই স্কুল, টালী অফিস গার্লস হাই স্কুল, মোহাম্মদপুর গার্লস হাই স্কুল ও লালমাটিয়া গার্লস হাই স্কুল।
এক পর্যায়ে এই শিক্ষক ধর্মঘটের মধ্যেই আমরা একদিন বেশ কজন মিলে বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করতে তৎকালীন গণভবন বর্তমান সুগন্ধায় গেলাম। কিন্তু ভারতের ইন্দিরা গান্ধীর বিশেষ দূত ডি পি ধর এসেছিলেন বলে সেদিন আর আমাদের ঢুকতে দেয়া হলোনা।
এর দু তিন দিন পরেই আমরা আবার একদিন সকালে গেলাম গণভবন। মজার বিষয় হলো টাকা পয়সা না থাকায় আমাদের যাতায়াতের বিষয়টি বেশ ইন্টারেস্টিং ছিল 😋। স্কুল ড্রেস পরা ৪-৫ টা মেয়ে হটাৎ যদি রাস্তায় দাঁড়িয়ে কারো গাড়ি থামিয়ে বলে আমাদের কি একটু গণভবনে নামিয়ে দেবেন ! অবাক হলেও যে কেউ মনে হয় এখনো এই উপকার টা সানন্দে করবেন। তবে আমাদের সৎ সাহস ছিল বলতেই হয়। ( কিছুটা মাস্তানি অবশ্য ছিল এটাও বলা যায় 😀)।
সুগন্ধার গেট থেকে বলে দিল বঙ্গবন্ধু মিটিং এ বিকেল ছাড়া দেখা হবেনা।
আমরাও না ছোড় বান্দা। আমরা সিদ্ধান্ত নিনাম আজ বিকেলে হলেও আমরা দেখা করবোই
বঙ্গবন্ধুর সাথে।
আমরা সারাদিন সবাই না খেয়েই বসে রইলাম পাশের রমনা
পার্কে। আমি পারভীন, আপেল, সাগর, সুইটি আর মেয়েদের নাম মনে নেই এখন আর।
সাথে অবশ্য ছাত্রলীগের ডাবলু ভাই, পিন্টু ভাই, শিরাজ ভাই, রিয়াজ ভাই আরো
কয়েকজন ছিলো।
বিকেল ৪ টার দিকে আমরা মেয়েরা গেটে গিয়ে দাঁড়ালাম।
বঙ্গবন্ধু গাড়িতে করে বের হচ্ছিলেন। গেট খুলতেই আমাদের দেখে গাড়ি থামিয়ে
তিনি নেমে এলেন।
জানতে চাইলেন " কি খবর তোরা কখন এসেছিস "।
সকালে- বলতেই বললেন
"সারাদিন তোরা কোথায় ছিলি "
রমনা পার্কে - বলতেই বললেন "মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে তোরা কিছু খাসনি। চল আমার সাথে। আমি সংসদ অধিবেশনে যাচ্ছিলাম। আয় আমার সাথে।"
বলেই বঙ্গবন্ধু আমাদের নিয়ে আবার সুগন্ধা মানে গণভবনে ঢুকলেন। হাক ডাক শুরু করে দিলেন। "এই এদের আগে কিছু খেতে দে।"
তারপর রুমের ভেতর দাঁড়িয়েই আমাদের সাথে কথা বলতে লাগলেন।
মাথায় হাত রেখে বললেন-
"এই তুই কোন ক্লাসে পড়স ?
আমি টেন বলতেই বললেন- "তো তোর কি। সমস্যা তো অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্রীদের।"
ঝটপট জবাব দিলাম- ওরা তো ছোট। আমরা বড়রা না দেখলে ওরা কি পারবে।
গম্ভীর স্বরে বললেন - " হুমম।
আমি তো ইউসুফ আলীকে বলে দিয়েছি।"
আমার জবাব ছিলো- আমরা কাউকে চিনিনা বঙ্গবন্ধু, আমরা আপনাকে চিনি আমরা আপনার কাছেই আসবো। সবাই সমস্বরে বকতে লাগলো কথাগুলো।
এবার বঙ্গবন্ধু একটু বিমোর্ষ চিন্তিত হয়ে জবাব দিলেন- " সবাই বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধু করো, বঙ্গবন্ধুর কাছে কি যাদু আছে। দেশে কত সমস্যা। রাতে ঘুমাতে পারিনা চিন্তায়। কিভাবে দেশ
চালাবো"
এমন আরো কিছু কথা যেনো নিজের মনেই বললেন। অনেক পরে বড় হয়ে বঙ্গবন্ধু কে বুঝেছিলাম, বঙ্গবন্ধুর কষ্টের কথাগুলি অনুধাবন করতে চেষ্টা করি আজও 😥।
কঠিন কথাগুলো না বুঝেই বললাম বঙ্গবন্ধু আপনি বলেন তো আইয়ুব খান যদি এটা করতো তবে আপনি তো সবার আগে প্রতিবাদ করতেন।
বঙ্গবন্ধু হেসে বললেন- "তোদের এই কথাগুলো কে শিখিয়ে দেয় বলতো।"
কেউ শেখায় না আমরা তো আপনার কাছ থেকেই শিখেছি।
হটাৎ বঙ্গবন্ধুর নজর গেলো জানালার বাইরে ছাত্রলীগের নেতাদের দিকে। তিনি
হেসে হাতের ইশারায় ডেকে বললেন- "ও নাটের গুরু তা হলে তোমরাই, এবার বুঝলাম।
আসো আসো ভেতরে আসো।"
সবাই ভেতরে এলো।
চলবে -----

