Wednesday, September 9, 2020

শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু : ( পর্ব ৪) এডভোকেট নাজমা কাউসার

 

শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু : ( পর্ব ৪)

১৯৭২ সালের শেষের দিকেই আমরা শেখ কামাল ভাইয়ের নির্দেশে আমাদের স্কুল শাখার সম্মেলনের আয়োজন করি। ইতিমধ্যে লালমাটিয়া গার্লস কলেজ শাখা ছাত্রলীগ ও গঠন করা হয়ে গেছে। সঙ্গত কারণেই স্কুল ও কলেজ এর সম্মেলন একসাথেই করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো।

সম্মেলনে যদিও কলেজের নাম ও ছিলো তবুও বলতে গেলে সব প্রস্তুতির ভার পড়লো আমাদের কয়েক জনের উপর। আমরা মূলত কামাল ভাইয়ের নির্দেশনা মতো লালমাটিয়ার সৈয়দ সিরাজ উদ্দিন ভাই, রিয়াজ উদ্দিন ভাই, ডাবলু ভাই, মোস্তফা ভাই ( পরবর্তীতে এডভোকেট ) মাসুম, আমি ও পারভীন মিলে অক্লান্ত পরিশ্রমে একটি চমৎকার সফল সম্মেলন করতে পেরেছিলাম। কার্ড ছাপানো থেকে প্রধান অতিথি পর্যন্ত আমাদের কনফার্ম করতে হয়েছে। আমি, পারভীন, সিরাজভাই, রিয়াজ ভাই সহ খুব ভোরে মিন্টু রোডে গিয়ে নিশ্চিত করেছিলাম মালেক উকিল সাহেব কে।

সংগঠনে বয়সের তুলনায় আমরা মনে হয় বেশ পরিশ্রমী ও সক্রিয় ই ছিলাম সে সময়। আর্থিক সহযোগিতায় ছিলেন লালমাটিয়া আওয়ামী লীগের রমিজ উদ্দিন ভাই, কাটাসুরের হাই সাহেব, শঙ্করের নাছিরুল্লাহ সাহেব। যাদের নাম কৃতজ্ঞতা ভরে স্বরণ করছি।


আমাদের লালমাটিয়া গার্লস স্কুলের দক্ষিণ পূর্ব দেয়াল ঘেসেই ছিলো ছাত্রলীগের লালমাটিয়া শাখা অফিস। যেটি এখন লালমাটিয়া স্পুটিং ক্লাব। আমরা টিফিন টাইমে ওদিকটার নিচু দেয়াল টপকে চলে যেতাম ছাত্রলীগ অফিসে। সম্মেলন উপলক্ষে বিকেলে ছুটির পরে ঘন্টা খানেক চলতো আবৃত্তি ও গানের রিহার্সেল। আজকের প্রোথিত জশা রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী মিতা হক ছিলো শিল্পীদের মাঝে অন্যতম। মিতা এতো ছোট ছিল যে ওর নিজস্ব ছোট সাইজের হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান করতো।

এছাড়াও ছিলো বন্ধু সাফিন সীমা, বন্ধু মির্জা বেবী , প্রিসিলা, সুইটি (পরবর্তীতে ফুটবলার টুটুলের বউ) বরকত ভাইয়ের বোন ( নামটি মনে করতে পারছিনা এই মুহূর্তে) সহ আরো অনেকে।

সেই সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মালেক উকিল। বিশেষ অতিথি ছাত্রলীগ সভাপতি শেখ শহিদুল ইসলাম, শেখ কামাল। নির্দিষ্ট দিলে লালমাটিয়া গার্লস কলেজের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হলো দিনব্যাপী সম্মেলন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

শেখ কামাল ভাই এমন একটি চমৎকার অনুষ্ঠান করতে পারার জন্য বিশেষভাবে আমাদের প্রশংসা করলেন। উনার নেতৃত্বে কাজ কাজ করতে পেরে আমরা আজও গৌরবান্বিত।

ইতিমধ্যেই ছাত্রলীগ অফিসে ও আমি পারভীন বেশ সুপরিচিত হয়ে গেলাম। সংগঠনে আমাদের সক্রিয়তার কারণে সবাই আমাদের পছন্দ ও স্নেহ করতেন। সিটি ছাত্রলীগে তখন উল্লেখযোগ্য ভূমিকায় ছিলেন প্রয়াত সৈয়দ নুরু, মমতাজ হোসেন, রউফ শিকদার, ইউনুস মিয়া, মোবারক হোসেন সেলিম, প্রয়াত শামীম আফজাল, কামাল মজুমদার, মহিবুল ইয়াজদানী খান ডাবলু, আবদুস সামাদ পিন্টু, জিগাতলার মুকুল ভাই, মাহবুব ভাই , মোহাম্মদপুরের পিয়ারু ভাই বাদল ভাই ইডেনের ফজিলাতুন নেসা আপা, আরজু আপা প্রমুখ।

চলবে......

শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরুঃ এডঃ নাজমা আক্তার

শ্রদ্ধে
য় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু : (পর্ব ৫)

কথায় আছে নির্মোহ সত্যি ইতিহাস লিখা হয় কমপক্ষে ৫০ থেকে ১০০ বছর পরে। এখন বোধকরি উনার বন্ধুরা এবং আমরা যারা এখনো বেঁচে আছি তাদের উচিত হবে প্রকৃত সত্য কে বলে ও লিখে যাওয়া। বাকিটা মূল্যায়ন করবে ইতিহাস।

শেখ কামাল ভাই কতটা মানবিক ও দায়িত্বশীল একজন মানুষ ছিলেন তা যারা তাঁকে দেখেননি তারা তা বুঝতে ও জানতেও পারবেন না। উনার নামে মিথ্যা অপপ্রচার ও কুৎসার আবরণে আজও ঢাকা পড়ে আছে প্রকৃত সত্য। আমরা যারা উনাকে দেখেছি উনার স্নেহধন্য ছিলাম কেবল তারাই জানি প্রকৃত অর্থে তিনি কেমন ছিলেন। 

১৯৭২ সালেই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন ২দিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় ঢাকার সারওয়ার্দী উদ্যানে। বঙ্গবন্ধু প্রধান অতিথি। বর্ণিল সাজে সেজেছে বিশাল উদ্দ্যান। দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যায় ছিলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মিত প্রামান্য চিত্র Stop Genocide.রাত হবে জেনেই আমি নানা ভাইয়ের অনুমতি নিয়ে আমার একই বয়সী খালাতো ভাই স্বপন ও পাশের বাসার বন্ধু দিপু কে সাথে নিয়ে গেলাম। আমরা তিন জনই ক্লাস নাইন এ পড়ি। ওরা দুজনেই রাজনীতি থেকে বেশ দূরে ছিলো। তাই আপাততঃ আমি ই দলনেতা। সেখানে গিয়ে আমি ছেলেদের বসার দিকের প্রথম সারিতে ওদের বসিয়ে বললাম ওখানেই বসে থাকতে। অনুষ্ঠান শেষে অথবা যাবার আগে আমি এসে ওদের নিয়ে বাসায় ফিরবো। যেনো কোথাও না যায়। হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী ভিড়ে কোথায় খুঁজবো পরে।

চমৎকার মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে মুক্তিযুদ্ধের

উপর জাহির রায়হানের প্রামান্য চিত্র। তার পরে আরো কিছু ডকুমেন্টারি দেখানো হবে। Stop Genocide শেষ হতেই রাত ৯ টার বেশি। দেরি হয়ে যাবে ভেবে আমি বাসায় ফেরার জন্য উঠলাম। কিন্তু হায় স্বপন দিপু তো নির্দিষ্ট আসনে নেই !

অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ওদের কোথাও পেলামনা। বাড়ী ফেরার দূরচিন্তায় ও ওদের প্রতি রাগে ক্ষোভে কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ মনে হলো মঞ্চের পাশে তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত কামাল ভাইকে গিয়ে বলি। উনাকে গিয়ে বলতেই আমার মলিন মুখ দেখে বললেন, "চিন্তা করিস না আমি দেখছি" ।

আমাকে মঞ্চের পাশে দাঁড় করিয়ে তিনি গিয়ে মাইকে ঘোষণা দিলেন- " দিপু স্বপন তোমারা কোথায় আছো নাজমা তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। তোমরা মঞ্চের কাছে দ্রুত চলে এসো।" দু তিন বার ঘোষণা দেয়ার পরে মহামান্য দীপক কুমার পাল দিপু আর কামরুল হাসান স্বপন হাসতে হাসতে এসে হাজির হলেন। উনারা নাকি একটু ঘুরে ফিরে দেখছিলেন চারদিকটা ! চমৎকার!

আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলাম। কামাল ভাই জানতে চাইলেন আমরা ফিরবো কি করে। রিকশায় বা স্কুটার এ ফিরবো বলতেই বললেন- "না অপেক্ষা কর আমি দেখছি।"
তিনি মোহাম্মদপুরের দিকেই যাবেন এমন একজনকে খুঁজে বের করলেন ও তাকে বললেন আমাদের নামিয়ে দিতে। তাকে বেশ ভালো করে বলে দিলেন আমাদের যেন ঠিক মতো পৌঁছে দেন। আমরা নিশ্চিন্তে সেদিন বাড়ী ফিরে ছিলাম বঙ্গবন্ধু পুত্রের আন্তরিকতায়।

আজো যখন ঘটনাটি মনে পড়ে তখন কেবলই বিস্ময়ে মনে হয়, একজন ক্ষুদ্র কর্মীর প্রতি কি ভীষণ মমত্ববোধ আর কি অসাধারণ মানবিক গুণাবলীর অধিকারী ছিলেন শেখ কামাল ভাই।

চলবে.........

শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরুঃ নাজমা আক্তার

শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু : (পর্ব ৬)

শেখ কামাল ভাই কতটা প্রতিবাদী নির্ভীক ও নিঃসংকচিত্ত ছিলেন তার একটি উদাহরণ দিচ্ছি পাঠকের বুঝার সুবিধার্থে।

আপাত দৃষ্টিতে ছোট্ট অথচ বিশাল এই সিদ্ধান্ত টি তিনি নিয়েছিলেন খোদ বঙ্গবন্ধু অর্থাৎ উনার পিতার বিরুদ্ধে ই। দেশের স্বার্থে মানুষের কল্যাণে কাজ করাই ছিল উনার মূল লক্ষ্য। আর সেই কারণেই সেনাবাহিনীর লোভনীয় চাকুরী ছেড়ে তিনি ফিরে এসেছিলেন সাধারণের মাঝে। 
১৯৭৩ সালের মে মাসের শেষ দিকে হটাৎ স্কুলে নোটিশ আসলো শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে। 
বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর পরেই অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত মেয়েদের জন্য অবৈতনিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। কিন্তু দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ক্রমশ খারাপের দিকে যাওয়ায় আপাততঃ তা স্থগিত ঘোষণা করলেন। সাথে জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ৫ মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধের নির্দেশ দিলেন শিক্ষা বোর্ড।

এই নোটিশ টি পাওয়ার পরে টিফিন টাইমে আমি পারভীন সহ বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলাম। ৫ মাসের বেতন একসাথে দেয়া অনেক ছাত্রীদের পক্ষেই সম্ভব হবেনা। কিছু একটা করতেই হবে।

তাৎক্ষণিক করিতকর্মা আমরা দুজন আমাদের সেই ঐতিহাসিক চোরাই পথে ইটের উপর ইট দিয়ে দেয়াল টপকে দেয়ালের ঠিক উল্টা পাশেই লালমাটিয়া ছাত্রলীগ অফিসে গেলাম। সেখানে সিরাজ ভাই ও রিয়াজ ভাইদের কে জানতেই উনারা বললেন কেন্দ্রে নেতাদের বিশেষ করে শেখ কামাল ভাইকে জানাতে।

স্কুল ছুটির পরেই আমরা সোজা চলে গেলাম ৩০ নং মিরপুর রোডের ছাত্রলীগ অফিসে। গিয়েই পেলাম শেখ শহীদ ভাই কে। তিনি ও একমত হলেন এবং পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে নির্দেশ জানাবেন বললেন।

শেখ কামাল ভাই ও সৈয়দ নুরু ভাই কেও আমরা জানালাম বিষয়টি। কামাল ভাই তাৎক্ষণিক ভাবেই বললেন ঢাকার বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে মেয়েদের কে বিষয়টি বুঝিয়ে ঐক্যবদ্ধ করতে। 
আর এই কাজে আমাদের সার্বক্ষণিক সাহায্য করবে আইডিয়াল কলেজের মহিবুল ইয়াজদানী খান ডাবলু , আবদুস সামাদ পিন্টু এবং ঢাকা কলেজের রউফ সিকদার, ইউনুস মিয়া ও মোহাম্মদপুর থানা ও লালমাটিয়া শাখা ছাত্রলীগ।

চলবে.......

শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু : (পর্ব ৭)

 শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু : (পর্ব ৭) ১৯৭২ - ৭৩ সাল সদ্য স্বাধীন যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি দেশ। রেলপথ, নৌপথ, রাস...