Thursday, September 10, 2020

শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু : ( পর্ব ১) Advocate Nazma Kawsar

শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু : ( পর্ব ১) 

https://www.facebook.com/nazma.a.kawsar

নিজেকে সৌভাগবান মনে করি কারণ, আমি শেখ কামাল এর হাতে গড়া কর্মী বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ধারক বাহক, ও হৃদয়ে লালন করি ধারণ করি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শ। ভালোবাসি আমার বাংলাদেশ কে।

সময়ের সাহসী সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল ছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর প্রথম ব্যাচের ক্যাডেট অফিসারদের একজন। ১৯৭১ সালের ৯ অক্টোবর তাঁদের পাসিং আউট হয়। এরপর সেকেন্ড লেফট্যানেন্ট হিসেবে শেখ কামাল, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এমএজি ওসমানীর এডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মুক্তিযুদ্ধের শেষে কিছুদিন পর তিনি সেনাবাহিনী ত্যাগ করেন এবং পুনরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র জীবনে ফিরে যান। সেখান থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।

যিনি অস্র ছেড়ে কলম হাতে নিয়েছিলেন, হাতে তুলে নিয়েছিলেন প্রিয় "সেতার" টা আবার। গড়ে তুলেছিলেন "আবাহনী ক্রীড়াচক্র" যা এই বাংলাদেশের ক্রীড়া জগৎ কে করেছে সমৃদ্ধ, যুব সমাজকে করেছে ক্রীড়া পারদর্শী।

সদ্য স্বাধীন দেশ ও জাতিকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ করতে যিনি নিরলস ছুটে বেড়িয়েছেন স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে।
স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও ধর্ম নিরপেক্ষতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করে নুতন দেশটিকে একটি আদর্শ সুখী সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার অঙ্গীকারে নেমেছিলেন নুতন লড়াইয়ে।


ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্কুল কলেজে ছাত্র ছাত্রীদের ছাত্রলীগের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তিনি।

তারই ধারাবাহিকতায় তিনি তার প্রচারণা টিম নিয়ে এলেন ঢাকার মোহাম্মদপুরের আমাদের " লালমাটিয়া গার্লস হাই স্কুলে।" গার্লস স্কুল বিধায় তিনি সরাসরি স্কুলে না ঢুকে বাইরে অপেক্ষা করছিলেন। সাথে উনার বন্ধু বরকত এ খোদা সহ মোহাম্মদপুর ছাত্রলীগের বাদল ভাই, পিয়ারু ভাই, মহিবুল ইয়াজদানী খান ডাবলু( বর্তমানে সুইডেন প্রবাসী) আব্দুস সামাদ পিন্টু ও লালমাটিয়া ছাত্রলীগের সৈয়দ সিরাজুদ্দীন কে নিয়ে।
অথচ প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু পুত্র চাইলে যখন তখন স্কুলে ঢুকতে পারতেন। কিন্তু সেই ভদ্রতা ও সভ্যতার শিক্ষা উনার ছিলো প্রবল।

স্কুলের ভেতরে আসলেন উনার বিশ্ববিদ্যালয়ের টিমের রাশিদা খানম আপা ও আব্দুল কুদ্দুস মাখন ভাবে স্ত্রী হাসু আপা সহ কয়েকজন। উনারা টিফিন টাইমে আমাদের নিয়ে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি, ছাত্র লীগের আদর্শ উদ্দেশ্য সম্পর্কে ও সদ্য স্বাধীন দেশ গঠনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে কাজ করার বিষয়ে আমাদের বুঝালেন। আমরা কজন বেশ আগ্রহ নিয়ে উৎসাহী হলাম।
দু তিন দিন উনারা আমাদের মোটামুটি প্রস্তুত করে, জানালেন হেড মিস্ট্রেস এর অনুমতি নিয়ে একদিন শেখ কামাল ভাই আসবেন স্কুলে। আমরা সকল ছাত্রীদের কে জানিয়ে দিলাম খবরটি। সবার মধ্যেই বেশ উৎসাহ উদ্দীপনা প্রধানমন্ত্রী পুত্র মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল কে দেখার ও শুনার।

অবশেষে ১৯৭২ সালের মাঝামাঝি রৌদ্র স্নাত এক দুপুরে তিনি এলেন এবং জয় করলেন সবার হৃদয়। হালকা পাতলা লম্বা সুদর্শন যুবক। অতি সাধারণ কিন্তু সবার থেকে আলাদা। দেখতে ঠিক বঙ্গবন্ধুর যুবক বয়সের ছবির মতোই অবিকল। কালো ফ্রেমের চশমা ঘন মোটা মোচ, উজ্জ্বল বুদ্ধিদৃপ্ত দুচোখের হাস্যোজ্জ্বল চাহনী। জীবনে প্রথম আমরা দেখলাম শেখ কামাল কে।

যিনি ছিলেন আপাদমস্তক একজন দক্ষ সংগঠক ও আদর্শ দেশপ্রেমিক। তিনি বললেন বোঝালেন ব্যাখ্যা করলেন দেশের প্রতি আমাদের দায়িত্ব কর্তব্য ও বর্তমান প্রেক্ষাপটে ছাত্রলীগের আদর্শ উদ্দেশ্য।নিজেদের কে একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা।

আমরা ছাত্রীরা মুগ্ধ বিমোহিত হলাম উনার বক্তব্যে, দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হলাম। নিজেদের মনে হচ্ছিল আমরাই এক এক জন নুতন দেশ গড়ার লড়াইয়ের বীর সৈনিক!

তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে আমাকে সভাপতি ও পারভীন সুলতানা কে সাধারণ সম্পাদক করে লালমাটিয়া গার্লস স্কুল শাখা ছাত্রলীগ এর সংক্ষিপ্ত কমিটি গঠন করা হলো।

চলবে.....

শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু : ( পর্ব ২)

 

শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু : ( পর্ব ২)

লালমাটিয়া গার্লস স্কুল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হবার পর আমি আর পারভীন তো মহানেতা বনে গেলাম। শেখ কামাল ভাই ও অন্যদের স্নেহ সেই ক্লাস এইটে নাইনে পড়া আমাদের মাঝে প্রচন্ড আত্মবিশ্বাস উৎসাহ ও দেশপ্রেম সৃষ্টি করলো।


আমরা প্রায়শই ছুটির দিনে ছাত্রলীগ অফিসে বিভিন্ন মিটিং এ যাতায়ত শুরু করলাম। ছাত্রলীগ অফিসে তখন ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের উল্টা পাশে ৩০ নম্বর মিরপুর রোড। যা বর্তমানে জনতা ব্যাংক। নিচ তলায় ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের ও দোতলায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ অফিস।
শেখ শহীদুল ইসলাম ভাই তখন ছাত্রলীগের সভাপতি। ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগে সৈয়দ নুরু ভাই ও মমতাজ ভাই দায়িত্বে। ওবায়দুল কাদের ভাই কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক ছিলেন।

যাক সবার আদর স্নেহ আমাদের মাঝে প্রত্যয় ও দৃঢ়তা, সাহস আরো বাড়িয়ে দিল। নিজেদের অনেক বড় বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক মনে করতাম। ওই বয়সে স্বাভাবিক ভাবেই যা হয়। এখন বুঝি ঢাকা শহরে একমাত্র স্কুল থেকে আমরা দুজনই যেতাম বলেই হয়তো সবাই অনেক বেশি স্নেহ করতেন।

শেখ কামাল ভাই তখন দেশ পুনর্গঠনে ও ছাত্রলীগ কে সংগঠিত করা, উনার আবাহনী ক্রিয়াচক্র কে এগিয়ে নেয়া , বিভিন্ন সামাজিক কাজ কর্মে সহ ছায়ানট এর সাংস্কৃতিক চর্চা ইত্যাদি নিয়ে মহা ব্যস্ত। আবাহনী ক্রিয়াচক্র প্রতিষ্ঠা করে তিনি আধুনিক ফুটবল খেলায় নব জাগরণ তৈরি করেছিলেন। প্রিয় আবাহনী যখন খেলায় জিততো কামাল ভাই দেখতাম ছাত্রীলীগ অফিসে সবাইকে মিষ্টি খাওয়াতেন। বঙ্গবন্ধুর খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক মনে পুত্র এই বীর মুক্তিযোদ্ধার চোখে মুখে থাকতো বিজয়ের কি প্রাণবন্ত উচ্ছাস কি নির্মল উল্লাস।

তবে সকল ব্যস্ততার কেন্দ্রবিন্দু দেশ পুনর্গঠন ও সংগঠন কে শক্তিশালী করে গড়ে তোলা। আনুষ্ঠানিক কোনো নেতৃত্বে না থেকেও তিনি পরম স্নেহ আদরে আগলে রাখতেন প্রতিটি নেতা কর্মীকে। খুঁজে রাখতেন জানতে চাইতেন সবার সমস্যা ও অসুবিধার কথা। বাবার সুযোগ্য পুত্রের মতোই প্রকৃত নেতার অসাধারণ সব গুণাবলী ছিলো উনার চরিত্রে। অত্যন্ত মেধাবী ও অনন্য সংগঠক, তুখোড় বক্তাও ছিলেন তিনি। উনার আচার আচরণ ছিলোনা খুব সাধারণ, বঙ্গবন্ধুর পুত্র বলে কোনো উদ্যত্ব দাম্ভিকতা কখনো দেখিনি উনার মাঝে। অত্যন্ত মিস্টিভাষী ও মিশুক প্রকৃতির একজন নিরঅহংকার সাহসী তরুণ।

অনেক স্মৃতির মাঝে একটা অসাধারণ স্মৃতি উনাকে নিয়ে না বললেই নয়। ১৯৭৩ এর ডিসেম্বর মাসে সম্ভবত ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সম্মেলন ছিলো রমনা গ্রিনে। বঙ্গবন্ধু প্রধান অতিথি। সারাদিনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শেষে সন্ধ্যায় ইঞ্জিনিয়ারস ইনস্টিটিউট এ সম্মেলনের মূল পর্বে। অর্থাৎ কমিটি গঠনের পালা। বিভিন্ন স্কুল কলেজ এর সভাপতি সাধারণ সম্পাদকরা কাউন্সিলর। তাদের নিয়েই সাবজেক্ট কমিটি।

ছাত্রলীগের ঐতিহ্য অনুসারে প্রথমে আলোচনা ও সমঝোতার ভিত্তিতে কমিটি করার চেষ্টা করা হলো। তা না হলে কাউন্সিলরদের ভোটে নির্বাচন দেয়ার বিধান। আর সে কারণেই বিভিন্ন স্কুল কলেজের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কে থাকতেই হলো। রাত প্রায় নয়টা সাড়ে নয়টা বেজে গেলো। বাসায় পৌঁছানো ও বকা খাওয়ার ভয়ে আমরা আতঙ্কিত। এখনকার মত ছিলোনা কোনো টেলিফোন সুবিধা তাই বাসায় সবাই চিন্তিত থাকবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কাউন্সিল কোনো ঐকমত্যের সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে পারছেনা। রাত গভীর হচ্ছে।

১৯৭৩ সালের ওই সময়টায় জাসদের গণবাহিনী ও সিরাজ শিকদারের সর্বহারা পার্টির ত্রাস চতুর্দিকে। শহরময় আতংক। ছিনতাই হচ্ছে, হাইজ্যেক হয়ে যাচ্ছে মেয়েরা। সন্ধ্যার পরেই প্রায় রাস্তা ঘাট জনশূন্য হয়ে যায়। সমস্ত দোষ ছাপানো হচ্ছে ছাত্রলীগের ঘাড়ে। শেখ কামাল নামে নানা কুৎসা রটনায় সিদ্ধহস্ত জাসদের মুখপত্র "গনকণ্ঠ"। এহেন কুৎসিত কথা ও জঘন্য মিথ্যাচার নেই যা করা হয়নি শেখ কামাল ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের বিরুদ্ধে। তার উপর ছিল মাওলানা ভাসানী " হক কথা" পত্রিকা !

জাসদ কায়েম করতে চাচ্ছে হাস্যকর বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র ☺️ 😊!
সিরাজ শিকদারের সর্বহারা পার্টি শ্রেণী শত্রু খতমের নামে করছে খুন খারাপি 😥😪 ! বাংলাদেশ নিয়ে তিনারা খুশি নয় কায়েম করবেন স্বাধীন পূর্ব বাংলা 😡 !!
তার উপরে স্বাধীনতা বিরোধী চক্র তাদের পাকিস্তানি ও মার্কিনী প্রভুরা তো আছেই ষড়যন্ত্রে সক্রিয়।

এমন একটি ভয়ানক পরিস্থিতি তে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে সদ্য স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধু সরকার বেশ বেকায়দায়। খুন হোচ্ছেন একের পর এক জনপ্রতিনিধি এম পি। ডুবে যাচ্ছে বা ডুবিয়ে দেয়া হচ্ছে খাদ্যের লবণের জাহাজ। আগুন লাগাচ্ছে পাটের গুদামে গম চালের গুদামেও আগুন !
যাক সেদিনের কথাই বলি। অবশেষে সিদ্ধান্ত হলো কয়েকজন যাবেন বঙ্গবন্ধুর কাছে এবং তিনি যাদের নেতা বানাবেন সবাই তা মেনে নেবেন।
এখন সমস্যা হলো এমন একটি ভয়াবহ পরিস্থিতি তে আমরা মেয়েরা যার যার বাসায় কিংবা হোস্টেলে ফিরবো কি করে। তখন রাত নয়টা দশটা মানেই অনেক রাত। অনাদের তো কান্না কাটির দশা। কি হবে এখন।

নেতৃবৃন্দ অভয় দিয়ে বললেন উনারাই পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু উপস্থিত কেউ ই সাহস পাচ্ছিলেন না এতগুলো মেয়েকে নিয়ে রাস্তায় বের হতে। জাসদ কিংবা সর্বহারা পার্টি একটা অঘটন ঘটাতে পারে। পাঠক একটি বার ভাবুন অনুমান করতে চেষ্টা করুন, ৭৩-৭৪ সালের সদ্য স্বাধীন বিধ্বস্ত বিপর্যস্ত দেশটিতে এরা কি ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলো। দেশ পুনর্গঠনে অংশ গ্রহন দূরের কথা উপরন্তু সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে দেশের মানুষ কে কষ্ট দিয়ে,পদে পদে বঙ্গবন্ধু কে বদনাম করতে। আজ এরাই সভার অনেকেই দেশপ্রেমিক সেজে বড় কথা বলছেন !

অবশেষে সবাই বললো শেখ কামাল ভাইকে খোঁজ। উনি কোথায় আছেন দেখে উনাকে বিষয়টি জানানো দরকার। একমাত্র বঙ্গবন্ধু পুত্রের পক্ষেই এটা সম্ভব। লোক পাঠানো হল কামাল ভাইকে আনতে।

চলবে ..........

শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু : ( পর্ব ৩)

 

শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু : ( পর্ব ৩)

সংবাদ পেয়ে শেখ কামাল ভাই সেই ডিসেম্বর এর শীতের রাতে তাৎক্ষণিক ছুটে এলেন একটা মাইক্রোবাস নিয়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে। ততক্ষনে প্রায় রাত দশটা বাজে। সে সময়টায় এটা অনেক রাত বলেই ববেচিত হতো। আমরা স্কুল কলেজের প্রায় ১২-১৪ জন মেয়ে ছিলাম।

কামাল ভাই আমাদের নিয়ে প্রথমেই গেলেন ইডেন কলেজ ছাত্রী হোস্টেলের নেত্রীদের নামাতে। যতদূর মনে পড়ে সেখানের ছিলেন ফজিলাতুন নেসা ( বর্তমান প্রতি মন্ত্রী ) আরজু আপা ( ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি সম্ভবতঃ) বেবী আপা, সুশু আপা ( বাঘা কাদের সিদ্দিকীর বোন বর্তমানে কানাডা প্রবাসী )। উনি নিজে গিয়ে অথরিটির সাথে কথা বলে উনাদের নামিয়ে দিলেন।
মোহাম্মদপুরে আমি ও পারভীন সুলতানা ( লন্ডন প্রবাসী ) কে নামানোর পথে অন্য অনেক কেই তাদের বাসায় নামিয়ে দিয়ে এলেন। লালমাটিয়া গার্লস কলেজের নেত্রীদের নামালেন তাদের হোস্টেলে। বলে আসলেন কর্তৃপক্ষকে বকা না দেয়ার জন্য।

অবশেষে এলেন আমাকে নামিয়ে পারভীন কে মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ড এর কলোনিতে নামাতে যাবেন। আমি তখন শংকর জাফরাবাদে আমার নানার বাসায় থাকি। মামারা দুজনেই মনি সিংহ এর কমিউনিস্ট পার্টি ও ন্যাপ (মোজাফ্ফর) রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। আমি তবুও বকা খাওয়ার ভয়ে দোয়া কালাম পড়ছি।

শেখ কামাল ভাই আমাকে নিয়ে নেমে দরজায় নক করলেন। নানাভাই দরজা খুললেন, আমি আস্তে করে "বললাম নানা ভাই'। অবাক হয়ে দেখলাম, কামাল ভাই নানাভাইকে সালাম দিয়ে দুই হাত জোড় করে বললেন, -

" নানা আমি শেখ কামাল। প্রথমেই আমি হাত জোড় করে ক্ষমা চাইছি আপনার কাছে। সম্মেলনের প্রয়োজনে আমরাই ওদের এতোক্ষণ রেখে দিয়েছিলাম। দয়া করে বকা দিবেন না আশা করি। দোষ আমাদেরই। তাই আমি নিজেই দিতে এসেছি। আমাকে বকা দিন।"

আলীগড় থেকে সুশিক্ষিত আধুনিক মনস্ক আমার নানাভাই ( কাজী সাদ উল্লাহ ) হেসে উনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। আবার ও সালাম দিয়ে কামাল ভাই বিদায় নিলেন।

এই ছিলেন আমাদের নেতা আমাদের কমান্ডার আমাদের রাজনৈতিক গুরু বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য জ্যৈষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল। বিনয়ী নম্র নিরহংকারী একজন বড় মাপের মানুষ।

আজকের দিনে রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী পুত্রের কাছে এমন ব্যবহার ও দায়িত্ব জ্ঞান আশা করাও দুঃস্বপ্ন মাত্র। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু পুত্র শেখ কামাল এর কি এমন দায় ছিল সেই রাতে আমাদের বাড়ী বাড়ী পৌঁছে দেয়ার! এটা তো উনার দায়িত্ব ছিলোনা, কিংবা কেউ তো উনাকে কৈফিয়ত ও নেবে না !

হ্যা উনার দায়বদ্ধতা ছিলো দেশের প্রতি, মানুষের প্রতি,সংগঠনের প্রতি, এদেশের তরুণ প্রজন্মের প্রতি। কারণ তিনি মুক্তিসেনা। এদেশ কে ভালোবেসে তিনি মা ভাই বোন কে বিপদের মুখে ফেলেও অস্র তুলে নিয়েছিলেন দেশের স্বাধীনতার জন্য। উনার নিজস্ব কর্তব্যবোধ ও দায়িত্বশীলতার জন্যই তিনি নির্দ্বিধায় অনেক দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিতেন। সকল বিপদে আপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন নিঃসংকোচে। প্রধানমন্ত্রী পুত্র হিসেবে কোনো অহংকার উন্নাসিকতা কখনোই উনাকে স্পর্শ করেনি।

অথচ সমালোচক ও প্রতিপক্ষ বঙ্গবন্ধু কে বিতর্কিত করতে প্রথমেই বেছে নিয়েছিলো এই মেধাবী সম্ভাবনাময় বীর মুক্তিসেনাকে। এমন কোনো জঘন্য মিথ্যাচার নেই যা উনার নামে না করা হয়েছিলো।
দেশী বিদেশী চক্রের কূটচাল ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য পুত্রকে বিতর্কিত করতে পারলেই বঙ্গবন্ধু কে বিপদে ফেলা যাবে। এবং দুঃখজনক হলেও সত্যি তারা তা করতে পেরেছিলো যথার্থই।

চলবে.......


শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু : (পর্ব ৭)

 শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু : (পর্ব ৭) ১৯৭২ - ৭৩ সাল সদ্য স্বাধীন যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি দেশ। রেলপথ, নৌপথ, রাস...