শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু : ( পর্ব ৩)
সংবাদ পেয়ে শেখ কামাল ভাই সেই ডিসেম্বর এর শীতের রাতে তাৎক্ষণিক ছুটে এলেন একটা মাইক্রোবাস নিয়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে। ততক্ষনে প্রায় রাত দশটা বাজে। সে সময়টায় এটা অনেক রাত বলেই ববেচিত হতো। আমরা স্কুল কলেজের প্রায় ১২-১৪ জন মেয়ে ছিলাম।
কামাল ভাই আমাদের নিয়ে প্রথমেই গেলেন ইডেন
কলেজ ছাত্রী হোস্টেলের নেত্রীদের নামাতে। যতদূর মনে পড়ে সেখানের ছিলেন
ফজিলাতুন নেসা ( বর্তমান প্রতি মন্ত্রী ) আরজু আপা ( ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের
সভাপতি সম্ভবতঃ) বেবী আপা, সুশু আপা ( বাঘা কাদের সিদ্দিকীর বোন বর্তমানে
কানাডা প্রবাসী )। উনি নিজে গিয়ে অথরিটির সাথে কথা বলে উনাদের নামিয়ে
দিলেন।
মোহাম্মদপুরে আমি ও পারভীন সুলতানা ( লন্ডন প্রবাসী ) কে
নামানোর পথে অন্য অনেক কেই তাদের বাসায় নামিয়ে দিয়ে এলেন। লালমাটিয়া গার্লস
কলেজের নেত্রীদের নামালেন তাদের হোস্টেলে। বলে আসলেন কর্তৃপক্ষকে বকা না
দেয়ার জন্য।
অবশেষে এলেন আমাকে নামিয়ে পারভীন কে মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ড এর কলোনিতে নামাতে যাবেন। আমি তখন শংকর জাফরাবাদে আমার নানার বাসায় থাকি। মামারা দুজনেই মনি সিংহ এর কমিউনিস্ট পার্টি ও ন্যাপ (মোজাফ্ফর) রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। আমি তবুও বকা খাওয়ার ভয়ে দোয়া কালাম পড়ছি।
শেখ কামাল
ভাই আমাকে নিয়ে নেমে দরজায় নক করলেন। নানাভাই দরজা খুললেন, আমি আস্তে করে
"বললাম নানা ভাই'। অবাক হয়ে দেখলাম, কামাল ভাই নানাভাইকে সালাম দিয়ে দুই
হাত জোড় করে বললেন, -
" নানা আমি শেখ কামাল। প্রথমেই আমি হাত জোড় করে ক্ষমা চাইছি আপনার কাছে। সম্মেলনের প্রয়োজনে আমরাই ওদের এতোক্ষণ রেখে দিয়েছিলাম। দয়া করে বকা দিবেন না আশা করি। দোষ আমাদেরই। তাই আমি নিজেই দিতে এসেছি। আমাকে বকা দিন।"
আলীগড় থেকে সুশিক্ষিত আধুনিক মনস্ক আমার নানাভাই ( কাজী সাদ উল্লাহ ) হেসে উনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। আবার ও সালাম দিয়ে কামাল ভাই বিদায় নিলেন।
এই ছিলেন আমাদের নেতা আমাদের কমান্ডার আমাদের রাজনৈতিক গুরু বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য জ্যৈষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল। বিনয়ী নম্র নিরহংকারী একজন বড় মাপের মানুষ।
আজকের দিনে রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী পুত্রের কাছে এমন ব্যবহার ও দায়িত্ব জ্ঞান আশা করাও দুঃস্বপ্ন মাত্র। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু পুত্র শেখ কামাল এর কি এমন দায় ছিল সেই রাতে আমাদের বাড়ী বাড়ী পৌঁছে দেয়ার! এটা তো উনার দায়িত্ব ছিলোনা, কিংবা কেউ তো উনাকে কৈফিয়ত ও নেবে না !
হ্যা উনার দায়বদ্ধতা ছিলো দেশের প্রতি, মানুষের প্রতি,সংগঠনের প্রতি, এদেশের তরুণ প্রজন্মের প্রতি। কারণ তিনি মুক্তিসেনা। এদেশ কে ভালোবেসে তিনি মা ভাই বোন কে বিপদের মুখে ফেলেও অস্র তুলে নিয়েছিলেন দেশের স্বাধীনতার জন্য। উনার নিজস্ব কর্তব্যবোধ ও দায়িত্বশীলতার জন্যই তিনি নির্দ্বিধায় অনেক দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিতেন। সকল বিপদে আপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন নিঃসংকোচে। প্রধানমন্ত্রী পুত্র হিসেবে কোনো অহংকার উন্নাসিকতা কখনোই উনাকে স্পর্শ করেনি।
অথচ সমালোচক ও প্রতিপক্ষ বঙ্গবন্ধু কে বিতর্কিত
করতে প্রথমেই বেছে নিয়েছিলো এই মেধাবী সম্ভাবনাময় বীর মুক্তিসেনাকে। এমন
কোনো জঘন্য মিথ্যাচার নেই যা উনার নামে না করা হয়েছিলো।
দেশী বিদেশী
চক্রের কূটচাল ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য পুত্রকে বিতর্কিত করতে
পারলেই বঙ্গবন্ধু কে বিপদে ফেলা যাবে। এবং দুঃখজনক হলেও সত্যি তারা তা করতে
পেরেছিলো যথার্থই।
চলবে.......
