কথায় আছে নির্মোহ সত্যি ইতিহাস লিখা হয় কমপক্ষে ৫০ থেকে ১০০ বছর পরে। এখন বোধকরি উনার বন্ধুরা এবং আমরা যারা এখনো বেঁচে আছি তাদের উচিত হবে প্রকৃত সত্য কে বলে ও লিখে যাওয়া। বাকিটা মূল্যায়ন করবে ইতিহাস।
শেখ কামাল ভাই কতটা মানবিক ও দায়িত্বশীল একজন মানুষ ছিলেন তা যারা তাঁকে দেখেননি তারা তা বুঝতে ও জানতেও পারবেন না। উনার নামে মিথ্যা অপপ্রচার ও কুৎসার আবরণে আজও ঢাকা পড়ে আছে প্রকৃত সত্য। আমরা যারা উনাকে দেখেছি উনার স্নেহধন্য ছিলাম কেবল তারাই জানি প্রকৃত অর্থে তিনি কেমন ছিলেন।
১৯৭২ সালেই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন ২দিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় ঢাকার সারওয়ার্দী উদ্যানে। বঙ্গবন্ধু প্রধান অতিথি। বর্ণিল সাজে সেজেছে বিশাল উদ্দ্যান। দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যায় ছিলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মিত প্রামান্য চিত্র Stop Genocide.রাত হবে জেনেই আমি নানা ভাইয়ের অনুমতি নিয়ে আমার একই বয়সী খালাতো ভাই স্বপন ও পাশের বাসার বন্ধু দিপু কে সাথে নিয়ে গেলাম। আমরা তিন জনই ক্লাস নাইন এ পড়ি। ওরা দুজনেই রাজনীতি থেকে বেশ দূরে ছিলো। তাই আপাততঃ আমি ই দলনেতা। সেখানে গিয়ে আমি ছেলেদের বসার দিকের প্রথম সারিতে ওদের বসিয়ে বললাম ওখানেই বসে থাকতে। অনুষ্ঠান শেষে অথবা যাবার আগে আমি এসে ওদের নিয়ে বাসায় ফিরবো। যেনো কোথাও না যায়। হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী ভিড়ে কোথায় খুঁজবো পরে।
অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ওদের কোথাও পেলামনা। বাড়ী ফেরার দূরচিন্তায় ও ওদের প্রতি রাগে ক্ষোভে কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ মনে হলো মঞ্চের পাশে তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত কামাল ভাইকে গিয়ে বলি। উনাকে গিয়ে বলতেই আমার মলিন মুখ দেখে বললেন, "চিন্তা করিস না আমি দেখছি" ।
আমাকে মঞ্চের পাশে দাঁড় করিয়ে তিনি গিয়ে মাইকে ঘোষণা দিলেন- " দিপু স্বপন তোমারা কোথায় আছো নাজমা তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। তোমরা মঞ্চের কাছে দ্রুত চলে এসো।" দু তিন বার ঘোষণা দেয়ার পরে মহামান্য দীপক কুমার পাল দিপু আর কামরুল হাসান স্বপন হাসতে হাসতে এসে হাজির হলেন। উনারা নাকি একটু ঘুরে ফিরে দেখছিলেন চারদিকটা ! চমৎকার!
আজো যখন ঘটনাটি মনে পড়ে তখন কেবলই বিস্ময়ে মনে হয়, একজন ক্ষুদ্র কর্মীর প্রতি কি ভীষণ মমত্ববোধ আর কি অসাধারণ মানবিক গুণাবলীর অধিকারী ছিলেন শেখ কামাল ভাই।
চলবে.........
