Tuesday, September 15, 2020

শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু : (পর্ব ১০)

 শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু : (পর্ব ১০)


বঙ্গবন্ধু কতো উদার কতো বিশাল হৃদয়ের মানুষ ছিলেন যা হয়তো আমাদের অনেকেরই বোধ বুদ্ধি বিবেচনা ও কল্পনার বাইরে।
বঙ্গবন্ধু কে ধারণ করা তাঁর আদর্শ মহানুভবতা অনুসরণ করা সকলের পক্ষে সম্ভব নয়। অসাধারণ চারিত্রিক দৃঢ়তা,স্বরণ শক্তি ও মানবিক গুণাবলীই উনার মুজিব ভাই থেকে বঙ্গবন্ধু, সেখান থেকে জাতির পিতা হয়ে উঠার অন্যতম কারণ।

আর তেমনি একজন পিতার গর্বিত সন্তান দৃঢ় চরিত্রের বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল পিতার সিদ্ধান্তের বিপরীতে কথা বলতেও পিছ পা হননি।

আজকের গ্লোবাল নেটওয়ার্ক এর এই রাজনীতিতে আমরা এমন কয়টি উদাহরণ দেখতে বা দেখতে পারবো জানিনা। খোদ জাতির পিতা প্রধানমন্ত্রী তাঁর নিজের দলের ছাত্র সংগঠনের উনার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করা দেখেও বুঝেও উদার হাসি দিয়ে তা মেনে নিলেন !! 👌

তেমনি ভাবে কোন প্রধানমন্ত্রী পুত্র সেই আন্দোলন গড়ে তোলার সাহস ও সক্ষমতা দেখতে পারবেন !

তৎকালীন গণভবনে অর্থাৎ সুগন্ধায় বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগের নেতাদের দেখেও শুধু হেসে "ওহ তোমরাই নাটের গুরু" কথাটি ছাড়া আর কিছুই বললেন না।

আমাদের নির্দেশ দিলেন -
"তোরা আর কষ্ট করে আসবি না আমার কাছে। তোদের নেতা শেখ শহীদ আছে, তার সাথে যোগাযোগ করে খবর জেনে নিবি।"

তারপর আমাদের খাওয়া দাওয়া শেষে গণভব

নের গাড়ী করে পৌঁছে দেবার নির্দেশ দিয়ে তিনি সংসদের উদ্দেশ্যে বিদায় নিলেন।

বঙ্গবন্ধু জাতীয় পিতা দেশের প্রধানমন্ত্রী, তিনি সংসদে না গিয়ে ওই মুহূর্তে গাড়ি থেকে নেমে আবার আমাদের নিয়ে সুগন্ধায় ঢুকলেন, আমাদের খাবার দেবার নির্দেশ দিলেন, কথা বললেন, আমাদের আশ্বস্ত করলেন তিনি কিছু একটা অবশ্যই করবেন আমাদের যাতে বাড়ি পৌঁছাতে কোন অসুবিধা না হয় সরকারী গাড়িতে পৌঁছে দেবার নির্দেশ দিলেন।


আপনারা যারা পাঠক তারা কিভাবে বিষয়টি দেখছেন ভাবছেন জানিনা। আমি শুধু এটুকু বুঝি, আমি আমরা সৌভাগ্যবান, যাদের জীবনে তাঁকে এমন করে এভাবে দেখার দূর্লভ সৌভাগ্য হয়েছিলো।

বঙ্গবন্ধুর আকাশ সমান উদারতার, মহত্ত্বের, বিশালত্বের, নেতৃত্বের পরিমাপ করার যোগ্যতা দুঃসাহস কোনটি ই আমার নেই। শুধু বলবো আমরা ঋণী কৃতজ্ঞ তাঁর কাছে।
ঋণী বাংলাদেশ। 🇧🇩

এর কিছুদিন পরেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের সংগঠিত সব স্কুলের হেড মিস্ট্রেস কে তাঁর স্কুলের কারা করা আন্দোলন করছে তাদের দু একজন কে নিয়ে মন্ত্রণালয়ে ডেকে পাঠালেন। সবই গেলেও আমরা গেলাম না।
কারণ আমাদের হেড মিস্ট্রেস শ্রদ্ধেয় খাদেষ্টা আপা আমাদের না নিয়ে একাই গেলেন। উনার জবাব ছিল স্কুল বন্ধ তাই কাউকে না সম্ভব হয়নি। ( যদিও আমাদের ঠিকানা উনার জানাই ছিলো)
পক্ষান্তরে অন্য স্কুলের ছাত্রীরা তাদের শিক্ষিকার শেখানো মতে বলে আসলো, আমরা কিছুই জানিনা, সব লালমাটিয়া স্কুলের ছাত্রীরা করেছে !

দিলো আমাদের পুরো আন্দোলনের বারোটা বাজিয়ে!!

শেখ শহীদ ভাই তখন ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধুর বাসায় ই থাকতেন। আমি পারভীন প্রায়শই সেখানে যেতাম উনাকে ও কামাল ভাই কে বিষয়টি নিয়ে তাগাদা দিতে।

এদিকে ধর্মঘট শেষে স্কুল খুললো। ছাত্রীদের প্রায় ৭ মাসের বেতন বাকি পড়লো। প্রায় কদিন পর পরই নিয়মিত আমার ডাক পড়তে থাকলো হেড মিস্ট্রেস এর রুমে।

প্রশ্ন একটাই আর কতো দিন আমরা বেতন না নিয়ে অপেক্ষা করবো শুধু তোমার কথায় ?
উত্তর ও একটাই - " বঙ্গবন্ধু কথা দিয়েছেন বেতন মাফ করবেন।"
আমরা দৃঢ় বিশ্বাসী বঙ্গবন্ধু নিরাশ করবেন না। হেড মিস্ট্রেস আপার প্রচ্ছন্ন স্নেহ ছায়া ছিলো বলেই তিনি বিশ্বাস করতেন। একদিন তো অন্য শিক্ষক রা ক্ষেপে গিয়ে বললেন

- এই মেয়েটার কথায় কেন যে আপনি বিশ্বাস করছেন বুঝিনা!
দেখতে দেখতে সেপ্টেম্বর মাস শেষের পথে আমাদের মবের ভেতর ধুক করছে।

অবশেষে এলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সেই বহুল প্রত্যাশিত নোটিশ। লালমাটিয়া গার্লস হাই স্কুলের ৯ মাসের বেতন মওকুফ করা হলো। খুশিতে বিজয়ে আমরা ছাত্রীরা উচ্ছসিত আত্মহারা। সভায় স্লোগান তুললো :

জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।

বঙ্গবন্ধু তাঁর কথা রেখেছেন। দেশের হাজার লক্ষ সমস্যার মাঝে জাতির পিতা ভুলে যাননি এতো ক্ষুদ্র নগণ্য আমাদের। এখানেই বঙ্গবন্ধু অসাধারণ ও অনন্য উচ্চতায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী জাতির পিতা।
আমরা বিকেলে ছাত্রলীগ অফিসে ছুটলাম।

চলবে---------

শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু : (পর্ব ৭)

 শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু : (পর্ব ৭) ১৯৭২ - ৭৩ সাল সদ্য স্বাধীন যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি দেশ। রেলপথ, নৌপথ, রাস...