শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু : (পর্ব ৮) https://www.facebook.com/nazma.a.kawsar?
বঙ্গবন্ধু কে সামনে দেখে আমি বেশ আবেগ আপ্লুত হলাম। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতা আমাদের বাংলাদেশের স্থপতির সামনে আমি দাঁড়িয়ে। কিন্তু উনার সাবলীল স্নেহময় কথায় মনে হলো উনি যেন কতো আপন।
যেহেতু মূল
নেতৃত্বে ছিলাম লালমাটিয়া গার্লস স্কুল তাই আমরাই কথা বললাম। সংক্ষেপে
বিষয়টি বঙ্গবন্ধু কে জানালাম। উনি শিক্ষা মন্ত্রী ইউসুফ আলীর সাথে আলাপ
করবেন বললেন।
উনি হানিফ ভাই ও মহিউদ্দিন ভাই কে ডেকে বললেন আমাদের দাবি গুলো লিখে নিতে। সেখানে তোফায়েল ভাই ও ছিলেন তখন।
আমরা আমাদের দাবী গুলো লিখে দিলাম।
প্রথমত: মেয়েদের অবৈতনিক শিক্ষা ব্যবস্থা পুনরায় চালু করতে হবে। দ্বিতীয়ত: পাঁচ মাসের বকেয়া বেতন মওকুফ করতে হবে। এছাড়াও গার্লস স্কুলের বিষয়ে আমরা আরো কয়েকটি বাড়তি দাবি দাওয়া লিখে দিয়েছিলাম এতদিন পরে আজ আর সেগুলো মনে নেই। সেদিনের মতো আমরা বিদায় নিলাম।
তার সপ্তাহ খানেক পরে আমরা লালমাটিয়া গার্লস স্কুল, মোহাম্মদপুর গার্লস ও টালী অফিস গার্লস স্কুল এর ছাত্রীরা মিলে সকালে মিছিল করে বঙ্গবন্ধুর বাসায় যাওয়ার কর্মসূচি নিলাম।
জুন মাসের নির্দিষ্ট দিনে আমরা সকালেই গিয়ে স্কুলে ছুটির ঘন্টা বাজিয়ে
দিলাম। হেড মিস্ট্রেস যখন শুনলেন বঙ্গবন্ধুর বাসায় যাবো শুনে তিনি হতবাক
কিং কর্তব্য বিমূঢ় ! উনি কিছু বলার আগেই ছাত্রীরা সব হুড়মুড় করে দৌড় দিলো
বাইরে।
কে শুনে কার কথা ছাত্রীরা ততক্ষনে গেটের বাইরে। গেটের দারোয়ান আমাদের পক্ষে 😉 ( আগেই ম্যানেজ)।
মোহাম্মদপুর স্কুল থেকে আপেল, সাগর ( ফর্সা লুৎফর ভাইয়ের ভাগ্নি) এর নেতৃত্বে মিছিল এলো। তত্ত্বাবধানে পিয়ারু ভাই বাদল ভাই।
টালী অফিস স্কুলের বেশ কজন এলো ছাত্রলীগের স্থানীয় নেতা জগলু ভাইয়ের নেতৃত্বে। সার্বিক নেতৃত্বে ডাবলু ভাই, সিরাজ ভাই, রিয়াজ ভাই।
সবাই কে একত্র করে আমরা লালমাটিয়া স্কুলের নেতৃত্বে মিছিল নিয়ে গেলাম বঙ্গবন্ধু ভবনে।
৩২ সে ঢুকার মুখেই কামাল ভাইয়ের সাথে দেখা। উনাকে আমাদের সাথে যেতে অনুরোধ করতেই বললেন: "আব্বার সামনে আমি ভয়ে যাইনা, তোরা যা। সব বলবি ভালো করে।"
কয়েক শত মেয়ে নিয়ে আমরা যখন হাজির হলাম তখন বঙ্গবন্ধু বেরিয়ে এলেন গেটের বাইরে।
প্রথমেই অবাক হয়ে বলে উঠলেন:
" হায় হায় তোরা করছোস কি ! এতো ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে তোরা এতদূর আসছিস ! যদি কেউ হারিয়ে যায় গাড়ির নীচে পড়ে !! "
তৎক্ষনাৎ পুলিশদের ডেকে বললেন মিছিলের সামনে পেছনে ব্যারিকেড দিতে। একটি বাচ্চাও যেনো বাইরে না যায়। আর কাজ শেষে পুলিশ অবশ্যই যেনো তাদের নিজ নিজ স্কুলে পৌঁছে দেয়।
তখন মনে হলো এই জন্যই তিনি জাতির পিতা, মানুষ কে আপন করে ভালোবাসার জন্যই তিনি মহান নেতা। এখন বুঝি আমাদের আসলে ভালো মন্দ বুঝার মতো বয়স ও তখন হয়নি। আর নেতারাও হয়তো উত্তেজনায় ভুলেই গিয়েছিলেন এসব সতর্কতা।
যাক বঙ্গবন্ধু বললেন," আমি তো বলেছি বিষয়টা দেখবো। পাগল..... তোরা আবার কেনো সবাই কে নিয়ে আসলি। "
তার পর তিনি আমাদেরকে কুশলাদি জানতে চাইলেন। বললেন এখন অফিসে যাবো তোদের আর মিছিল নিয়ে আসতে হবেনা। নেতৃস্থানীয় কয়েকজন আসলেই হবে।
হঠাৎ দেখলাম আমি যখন দীর্ঘদেহী সুদর্শন বঙ্গবন্ধুর সাথে উপর
দিকে তাকিয়ে
কথা বলছি, তখন ক্লাস সেভেনের দুষ্ট প্রিসিলা নিচে বসে বঙ্গবন্ধুর পায়জামা
ধরে কি যেনো করছে 😊 !!
আমিতো বঙ্গবন্ধু প্রশ্নের উত্তর দিতেই ব্যস্ত।
এসময় বঙ্গবন্ধু বারবার এদিক ওদিক দেখছিলেন। বিষয়টি বেশ পরে বুঝেছিলাম।আর আমাদের ছাত্রলীগের নেতারা কেউ দেয়ালের আড়ালে কেউ গাছের আড়ালে লুকচ্ছিলেন 😊।
বঙ্গবন্ধু বিদায় নিয়ে অফিসে চলে গেলেন। পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা আমাদের (গার্ড অফ অনার 😀) মানে পাহারা দিয়ে স্কুলে পৌঁছে দিলেন। প্রাথমিক বিজয়ে আমরা মহা আনন্দিত।
চলবে--------


